ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বদলে গেছে সিরিয়া যুদ্ধের চিত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৫

মাত্র এক সপ্তাহেই পাল্টে গেছে সিরিয়ার যুদ্ধের চিত্র। এই সাত দিনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার স্বঘোষিত ‘মহান এবং অতুলনীয় জ্ঞানের’ মাধ্যমে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।

তার নির্ধারিত কয়েকটি ঘটনা আমেরিকার মিত্রশক্তি এবং সিরিয়ার কুর্দিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অন্যদিকে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বিরোধী শক্তি অর্থাৎ তুরস্ক, সিরিয়ার বাশার আল আসাদের শাসন ব্যবস্থা, এদের সমর্থক, রাশিয়া ও ইরানের জন্য। এমনকি সকল দেশের শত্রু আইএস এরও ভাগ্য খুলেছে।

সিরিয়ার আট বছরের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র পূর্ণগঠন ও পরিবর্তন করেছে। আর গত এক সপ্তাহ ছিল নতুন আরেকটি বাঁক। সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বুদ্ধিমত্তা তাকে এ বিষয়ে আগেই আভাস দিয়েছিল। অথবা তার নিজের সহজাত প্রবৃত্তির উপর নির্ভর করার অভ্যাস, মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতির বিষয়ে তাকে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে তাড়িত করেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে যে, সিরিয়ার ভাগ্য দেশটির নিজস্ব জনগণ নয় বরং বিদেশিরা নির্ধারণ করবে। বারবার এ ধরনের হস্তক্ষেপ সিরিয়ার যুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে এবং টিকিয়েও রেখেছে। সিরিয়ায় প্রভাব এবং শক্তির প্রতিযোগিতা সম্পর্কে লিখতে হলে এ যুদ্ধের শিকার মানুষদের ভোগান্তির বর্ণনার মধ্য দিয়ে তা শুরু করতে হবে।

প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপই বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ধ্বংস এবং মৃত্যু ডেকে এনেছে। এ ধরনের নির্দেশ যেসব নেতারা দিয়েছে তাদের সবার ওই মানুষদের ভোগান্তির ভিডিও দেখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এসব চিত্র অনলাইন কিংবা টেলিভিশনে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। ট্রাম্পের বর্ণিত সীমাহীন যুদ্ধাবস্থা থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত তুরস্ককে সিরিয়ায় সেনা অভিযানের সবুজ সংকেত দিয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, এসডিএফ বা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চান তিনি, কারণ তারা তার নিজের দেশের কুর্দি বিদ্রোহীদের মিত্র বাহিনী।

তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সীমান্তের উভয় পার্শে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা এবং ২০ মাইল জুড়ে একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল তৈরি করা। ওই এলাকায় তিনি ১০ লাখেরও বেশি সিরিয় শরণার্থীকে প্রত্যাবাসন করতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র যখন সিরিয়ার কুর্দি এবং আরবদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিতে চাইলো আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, তখন তাদের ভাবী- কুর্দি মিত্রদেরকে জঙ্গি হিসেবে দেখছিল আরেক ন্যাটো মিত্র দেশ তুরস্ক। তবে ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা হতে পারে জেনেও একে না দেখার ভান করেছিল ওয়াশিংটন। আর এখন সেই ভবিষ্যতটিই চলে এসেছে, আর সমস্যাটিও বেড়েছে।

এক সপ্তাহ আগে, মুষ্টিমেয় কিছু মার্কিন সেনা সিরিয়ার কুর্দিদের জন্য নিরাপত্তার প্রতীক হয়েছিল। কট্টরপন্থী জিহাদি গ্রুপ আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র হয়ে উঠেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশ বিমান শক্তি এবং বিশেষ বাহিনীর সেনাদের পাঠালেও যুদ্ধক্ষেত্রে লড়েছে এবং প্রাণ দিয়েছে কুর্দি সেনারা। যখন কথিত ওই খিলাফতের ও আইএসের পতন হল, কুর্দিরা জড়ো হয়ে হাজার হাজার জিহাদি যোদ্ধাকে বন্দী করলো।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কয়েকটি টুইট করতে যে সময় লাগে, তার চেয়েও কম সময়ে কুর্দিরা বুঝেছিল যে তাদেরকে বর্জন করা হয়েছে এবং এটি আমেরিকার সামরিক বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার কুর্দিদের বর্জন করার অভিযোগ নাকচ করে দেন।

কিন্তু যেভাবে তুর্কিরা অগ্রসর হচ্ছে এবং আমেরিকানরা চলে যাচ্ছে, তাতে কুর্দিরা সেই আশ্বাস পাচ্ছে না। নিজের অস্থির ইতিহাসে আবারো বিদেশি শক্তির নিগৃহীত মিত্র শক্তি হিসেবে নিজেদের পেলো কুর্দিরা। তারা আবারো নিজেদের পুরনো শত্রু দামেস্কের দিকেই ফিরে গেছে।

রোববার কুর্দি ঘোষণা করেছে যে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে একটি চুক্তি সই করেছে তারা। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১২ সালের পর থেকে তুরস্কের সাথে সীমান্তের যেসব এলাকায় দামেস্ক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারেনি সেসব এলাকাতেও প্রবেশাধিকার পাচ্ছে আসাদ সেনারা।

এটা বাশার আল আসাদের শাসন ব্যবস্থার জন্য একটি বড় জয়। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যেসব ঘাঁটি রক্ষণাবেক্ষণ করতো সেনারা সেগুলো থেকে দ্রুত সরে গেছে। আসাদের অনুগতরা সিরিয়ার পতাকা উত্তোলন করেছে।

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক নীতির জন্য এই দিনটি ছিল একটি ভয়াবহ দিন। কুর্দিদের মিত্র বাহিনী, সিরিয়ার একাংশে তাদের নিজেদের পরিচালিত শাসনের নিরাপত্তা, সব মিলিয়ে যুদ্ধাবসানের খেলায় আমেরিকানদের একটা পক্ষ দিয়েছিল। এটা ছিল আসাদ সাম্রাজ্যের সমর্থক শক্তি: রাশিয়া ও ইরানকে দূরে রাখার একটি উপায়ও। আমেরিকানদের বিদায় এবং সিরিয় বাহিনীর অগ্রসর হওয়াটাও তাদের জন্য জয়।

এর মধ্য দিয়ে জিহাদি চরমপন্থি ইসলামি স্টেটের পুনরুত্থানেরও একটি সুযোগ তৈরি হল। টেলিগ্রাম নামে একটি বার্তা পাঠানোর অ্যাপে তারা সিরিয়ায় নতুন করে সহিংসতা ছড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা তাদের দখলকৃত এলাকা বা খিলাফত হারিয়েছে, কিন্তু যারা কারাগারের বাইরে ছিল তারা নিজেদেরকে স্লিপার সেলের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে গেরিলা হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এখন কুর্দিরা ধুঁকছে, এই সুযোগে তারা কুর্দিদের কারাগারে আটক হাজার হাজার যোদ্ধাকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখছে। তাদের অনেকেই কুখ্যাত খুনি যারা আবারো বন্দুক এবং গ্রেনেড বহনের সুযোগ পেলে একটি বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে। আর এটা শুধু সিরিয়ার জন্য হবে না বরং তার আরো দূরেও ছড়িয়ে পড়বে। বস্তুত বলতে গেলে, পশ্চিমা সরকার গুলো নতুন করে আইএসের হুমকি সামলানোর বিষয়ে বেশ ভয়ে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সংকট যখন ইউরোপের দরজার কড়া নাড়তে আসে ঠিক সেই মুহূর্তে অভিযান বন্ধ করতে তুরস্ককে আহ্বান জানায় পশ্চিমা সরকারগুলো। অনেক ন্যাটো সদস্যই সিরিয়া নতুন একটি দুঃস্বপ্নকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখছেন।

যারা রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে আরেক ন্যাটো সদস্য তুরস্কের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে তারা। রাশিয়া বলছে যে তারা তুরস্কের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখে চলছে। কিন্তু যুদ্ধের চলমান পরিস্থিতিতে, ভুল বোঝার এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সংকট বাড়ার আশঙ্কা সব সময়ই থাকে।

সম্ভবত গত সপ্তাহ যা ঘটেছে তা সিরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তিকে অনেকটা সহজই করেছে। যুদ্ধের দুই প্রধান পক্ষ আমেরিকা এবং কুর্দিরা পুরো চিত্র থেকে মুছে গেছে। এবং প্রেসিডেন্ট আসাদ তার মিত্র দেশ রাশিয়া এবং ইরানকে নিয়ে সিরিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধে নিজেদের জয়কে আরো পোক্ত করবে। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১৬অক্টোবর/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

মস্কোতে কনসার্টে হামলা: এখনো প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ 

বাবা কোটিপতি, ২০ বছর ধরে জানতই না ছেলে!

গাজা যুদ্ধের ১৭৩তম দিন, প্রাণহানি বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার

মস্কোতে সন্ত্রাসী হামলা: ফের মৃত্যুদণ্ড চালুর আহ্বান রুশ আইনপ্রণেতাদের

দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, বেশিরভাগই সাগরে ডুবে: জাতিসংঘ

৩০ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেবে ভারত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :