প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগের বৈঠকেও থাকছেন না ওমর ফারুক
কাউন্সিলকে সামনে রেখে যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী রবিবার বিকালে গণভবনে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা যাবেন। তবে সেই বৈঠকে থাকছেন না চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর সমালোচিত এই নেতাসহ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের গণভবনে যেতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের অনুমতি নেয়ার জন্য গণভবনে যান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সময় চান। প্রধানমন্ত্রী আগামী রবিবার বিকাল পাঁচটায় গণভবনে যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুমতি দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী হারুনুর রশিদকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ আছে এমন কেউ যেন তোমাদের সঙ্গে গণভবনে না আসে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুতেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (গ্রেপ্তারের পরে বহিষ্কৃত) ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে। অন্যদিকে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই ওমর ফারুকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়।
জানা যায়, সবশেষ গত ৭ অক্টোবর রাতে ওমর ফারুক চৌধুরী গণভবনে গিয়েছিলেন। ওইদিন ভারত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন। গণভবনে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা নাম প্রকাশ শর্তে জানিয়েছেন, যুবলীগ নেতারা যে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে দিকে প্রধানমন্ত্রী তাকাননি। এর আগে গত ৩ অক্টোবর ও ১ অক্টোবরও ওমর ফারুক চৌধুরীকে গণভবনে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক হিসাব তলব ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে আর প্রকাশ্য আসছেন না তিনি। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চেয়ারম্যানের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন নেতা। তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কথাও বলেন তারা।
যুবলীগ সূত্র জানায়, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক থাকেন চেয়ারম্যান, কিন্তু সপ্তম কংগ্রেসের প্রস্তুতি কমিটিতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে না রাখার জন্য আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রবিবারের বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আসায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকেও সম্মেলনের আগে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে যে কঠোর রয়েছেন সেই বার্তাটা দেয়া হবে।’
জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় কংগ্রেসের বিষয়ে নেত্রীর গাইডলাইন দরকার আমাদের। এ বিষয়ে নেত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের অনুমতি নিতে আজকে নেত্রীর সঙ্গে আমি দেখা করেছিলাম। তিনি আমাদের আগামী রবিবার বিকাল ৫টায় গণভবনে সময় দিয়েছেন।’
ওই বৈঠকে সংগঠনের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেহেতু প্রেসিডিয়ামে আসেন নাই, সেহেতু রবিবারের বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন কি না সেটা পরিষ্কার নয়।’
আপনাদের সংগঠনের চেয়ারম্যানকে কি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এই বিষয়টা জানার জন্য আপনারা আমাদের রবিবার বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।’
আপনি কি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেই আজকে গণভবনে গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘না। ওনার (ওমর ফারুক চৌধুরী) সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কোনো কথাই হয়নি। গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আমাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই আমি একাই গণভবনে গিয়েছিলাম।’
(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/টিএ/জেবি)