কুমিল্লা ডিপো

বিআরটিসি বাসের কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লুটপাট

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০৪

মাসুদ আলম, কুমিল্লা

কুমিল্লা বিআরটিসি ডিপোতে বাসের ইঞ্জিন, চাকা, চেসিসসহ নেই কোনো যন্ত্রাংশ। ভাঙা কয়েকটি সিট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক-একটি বাসের কংকাল। এসব বাসের ইঞ্জিন, চেসিস এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ লুটপাট করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কুমিল্লা বিআরটিসি কার্যালয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ত্রিশের অধিক বাস। কর্মকর্তাদের রদবদল হলেও বাসগুলো অকশনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ময়লা-আবর্জনা, হাঁটু পানি এবং জঙ্গলের মধ্যে বছরের পর বছর পড়ে থাকায় অর্ধেকের বেশি বাস ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন এগুলো কেজিতে বিক্রি ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ উঠেছে, ডিপোতে পরিত্যক্ত স্থানে থাকা বাস থেকে টায়ার, চাকা, সিট এবং ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হয়েছে। বেশির ভাগ বাসের ইঞ্জিন, চেসিসসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে শুধু খোলস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন সড়কের পাশে কুমিল্লা বিআরটিসি ভবন। ইঞ্জিন এবং যন্ত্রাংশ বাস থেকে খুলে সহজে বিক্রির একটি আদর্শ স্থান হলো কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন সড়ক। কারণ এই সড়কের দুই পাশে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকান, গ্যারেজ এবং নতুন-পুরাতন পার্টস বিকিকিনির শত দোকান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির এসি-ননএসি অর্ধশতাধিক বাস রয়েছে। কিছুদিন আগে কুমিল্লায় যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে স্বায়ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানে সরকার ১৪টি এসি বাস দিয়েছে। বাসগুলোর উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।   

বাকি ননএসি বাসগুলো লক্কর-ঝক্কর। ফিটনেস, রুট পারমিটসহ কাগজপত্র নেই এসব বাসের। ফলে প্রতিনিয়ত বাসগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন সংকট থাকায় প্রশাসন বিআরটিসির বাসগুলো ভাড়ায় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী পরিবহন করছে।

বিআরটিসি ডিপোতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী জানান, কুমিল্লা বিআরটিসি ডিপোতে বাসের ইঞ্জিনসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি লুটপাট করা হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলে গাড়ি থেকে ইঞ্জিন এবং যন্ত্রাংশগুলো নামানো হয়। পরবর্তী সময়ে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুরাতন গাড়ির পার্টস হিসেবে এসব বিক্রি করা হয়। এছাড়া যে কয়েকটি বাস চলে সেখান থেকে প্রতিদিনের আয়ের অর্ধেকও জমা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা স্টেশন রোডের গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা এবং মোটর মেকানিক হানিফ ও ইউসুফ জানান, বিআরটিসি গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে মেরামত করার জন্য বাস থেকে ইঞ্জিন নামানো হয়। মেরামত করতে গিয়ে যে ইঞ্জিনগুলো পুনরায় বাসে উঠানো সম্ভব হয় না, সেগুলো আর উঠায় না। হাত মেললেই বাসের পুরাতন যন্ত্রাংশ কেনা যায় বিআরটিসি থেকে। একই কথা বলেন, বিআরটিসির কয়েকজন মেকানিকও।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিআরটিসি কুমিল্লা বাস ডিপো ম্যানেজার কামরুজ্জামান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে বিআরটিসির ডিজিএম অপারেশন ঢাকার সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, বিআরটিসির স্বায়ত্বশাসিত হওয়ায় জেলার বাস ডিপো ম্যানেজাররা গণমাধ্যমের বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। তাই হয়তো তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।

পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা বাসের যন্ত্রাংশ লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশের যেসব জেলায় বিআরটিসির ডিপোতে নষ্ট এবং পরিত্যক্ত বাস পড়ে আছে সেগুলো অকশনের মাধ্যমে বিক্রি করার জন্য আমরা একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছি গণমাধ্যমে। তবে আমরা অভিযোগগুলো সরেজমিনে গিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর