পদ্মায় ইলিশ শিকার

চারঘাট সীমান্তে গোলাগুলিতে বিএসএফ জওয়ান নিহত

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৩৪ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৩১

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
বিজিবি-বিএসএফ

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে অনুপ্রবেশ করে ইলিশ শিকারের সময় ভারতীয় এক জেলেকে আটক করার জেরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলিতে একজন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক বিএসএফ জওয়ান। বিএসএফের পক্ষ থেকে বিজিবির কাছে এ দাবি করা হয়েছে। ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমও একই খবর জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদরের বিপরীতে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনা শাহরিয়ার খাল নামক এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এলাকাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গীর থানার চর পাইকমারি সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে।

নিহত বিএসএফ সদস্য হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং। গুলিবিদ্ধ অপরজন রাজবীর সিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিজিবি-বিএসএফ গোলাগুলির ঘটনাকে অনাকাক্সিক্ষত উল্লেখ করে বলেন, এতে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।
স্থানীয় বিজিবি ও মৎস্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, প্রজনন মৌসুমে পদ্মায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে ইলিশ ধরছিল। তখন বিজিবি সদস্যদের নিয়ে অভিযানে যান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। সেখানে ভারতীয় জেলেকে আটকের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবি প্রণব মণ্ডল নামে এক ভারতীয় নাগরিককে মাছ ধরা জালসহ পদ্মা থেকে আটক করে নিয়ে আসে। জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামে তার বাড়ি। প্রণবের বাবার নাম বসন্ত মণ্ডল। 
রাতে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরারত তিন জেলেকে আটক করতে গেলে দুজন পালিয়ে যান।  একজনকে জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি নিশ্চিত হয় যে আটক জেলে ভারতীয় নাগরিক।

কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিড বোট নিয়ে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জেলেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে তাদের জানায়।

ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করেন। তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন তারা। বিজিবি সদস্যরা এতে বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে ৬ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা গুলি করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।‘

ঘটনার পর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিবির ১ ব্যাটালিয়ন ও ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের ভেতরে পদ্মা নদীর চর শাহরিয়ার বাঁধ নামক স্থানে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এই পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, সেখানে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট দাবি করেন তাদের একজন সদস্য নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। তবে ঘটনার সময় বিজিবি ফাঁকা ফায়ার করেছে বলে উল্লেখ করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।

আটক ভারতীয় জেলেকে ফেরত দেয়া হয়নি জানিয়ে বিজিবির অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, তাকে চারঘাট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।

পতাকা বৈঠকে উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে পতাকা বৈঠক শেষ হয়েছে বলেও জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/মোআ)