জিপি রবিতে বসছে প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৩২ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৫৫
  • প্রশাসক নিয়োগ সময়ের ব্যাপার: টেলিযোগাযোগমন্ত্রী
  • প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে: বিটিআরসি চেয়ারম্যান
  • এটা হবে আদালতের প্রতি অনাস্থার শামিল: রবি

দেশের বৃহত্তম দুই মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণ ফোন ও রবির কাছ থেকে নিরীক্ষা আপত্তি শেষে পাওনা আদায়ে প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। নিরীক্ষা আপত্তি অনুসারে এই দুই কোম্পানির কাছে যে পরিমাণ টাকা পাওনার কথা বলছে তা আদায় করতে পারেনি বিটিআরসি। বিষয়টি সমাধানে হস্তক্ষেপ করেছেন খোদ অর্থমন্ত্রীও। দুই দফায় বৈঠক হলেও কোনো ফল আসেনি। উল্টো বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়েছে গ্রামীণ ফোন।

বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ‘মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। বিটিআরসি সব দিক বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ করবে। এখন কাকে, কোন প্রক্রিয়ায় প্রশাসক নিয়োগ দেবে বিটিআরসি সেই সিদ্ধান্ত নেবে।’

প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি এটা ফরমুলেট করবে। প্রশাসক কাকে নিয়োগ করা হবে, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ নেব। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

টাকা আদায় হয়ে গেলে প্রশাসক আর থাকবে না জানিয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগের পর এনওসি চালু করা হতে পারে। ব্যবসা ও লাভের জন্য এনওসি দরকার হবে।’

কবে নাগাদ দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে এবং সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

অন্যদিকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছেন। প্রতি অপারেটরে প্রশাসকসহ চারজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন প্রশাসকের সঙ্গে হিসাব, আইন ও টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা পাওনা আদায় বিষয়ে সহযোগিতা করবে।’

সরকারি কর্মকর্তারাই প্রশাসক পদে নিয়োগ পাবেন কি না- জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নেব এবং যোগ্যদের এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তবে প্রশাসক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ এরআগে ডেসটিনি ২০০০ লিমিডেট নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ দিতে চেয়েও তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

এদিকে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক চলার সময়ই গতকাল উচ্চ আদালতে গ্রামীণফোনের একটি আবেদনের শুনানি চলে। শুনানি শেষে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায় প্রক্রিয়ার উপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বিচারপতি আব্দুল হাকিম এবং বিচারপতি ফাতেমা নজীব সমন্বয়ে গঠিতহ হাইকোর্ট বেঞ্চ।

গত এপ্রিলে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে গ্রামীণফোনকে এবং ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা দাবি করে রবিকে নোটিশ পাঠায় বিটিআরসি। টাকা পরিশোধের জন্য অপারেটর দুটিকে দুই সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় বিটিআরসি গত ৪ জুলাই অপারেটর দুটির ব্যান্ডউইথ সীমিত করে দেয়।

পরে অবশ্য সেই আদেশ প্রত্যাহার করে এনওসি ( নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেওয়া বন্ধ করা হয়। এরপরও অপারেটর দুটি সমস্যা সমাধানে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর কেন অপারেটর দুটির লাইসেন্স বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। এরপরই আসে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো অপারেটর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে তার লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করতে পারে বিটিআরসি। লাইসেন্স স্থগিত করা হলে সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা রিসিভার) নিয়োগ দেওয়া যায়।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নিয়োগ করা প্রশাসক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করে পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। পরিশোধ করা শেষ হলে সরকারও প্রশাসক তুলে নেবে। এখন পর্যন্ত এটাই চিন্তা।

গ্রামীণফোন ও রবি দেশের সবচেয়ে বড় দুই মোবাইল ফোন অপারেটর। নরওয়েভিত্তিক টেলিনর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে। এটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও নিবন্ধিত। দেশের ১৬ কোটি ১৮ লাখ মুঠোফোন গ্রাহকের সাড়ে ৭ কোটিই তাদের। অন্যদিকে রবি মালয়েশিয়ার আজিয়াটা বারহাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৭৯ লাখ, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে আদালতের প্রতি অনাস্থার শামিল দাবি করে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি যে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন ভিত্তিহীন।’

‘তারপরও আলাপ-আলোচনায় সমাধান না হওয়ায় ন্যায্য সমাধানের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। তাই আদালতের সিদ্ধান্তে আসার আগেই প্রশাসক নিয়োগের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার শামিল। প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত এ দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি (এফডিআই) এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/বিইউ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :