ভুল বোঝাবুঝি নাকি বিএসএফের বাড়াবাড়ি?

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৫৩ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৫৪

শরিফুল হাসান

ভুল বোঝাবুঝির কারণে রাজশাহীর চারঘাটে বিজিবি-বিএসএফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে? ঘটনার সব খবর প‌ড়ে, বি‌জি‌বি-বিএসএফের ভাষ্য প‌ড়ে আমার কাছে তো সেটা মনে হয়নি।

শুরু থে‌কে ঘটনাগু‌লো দে‌খেন। ঘটনার ছ‌বি দে‌খেন। আর ঘটনাস্থল সীমা‌ন্তে নয়, বাংলা‌দে‌শের ভেত‌রে। আইন অনুযায়ী আরেক দেশের সীমান্তের ভেত‌রে বৈধ অনুমতি ছাড়া প্র‌বেশ করা যায় না। কিন্তু ভারতীয় তিন জে‌লে বাংলাদেশের ভেতরে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল এলাকায় ঢু‌কে মাছ ধরছিলেন।

‌দ্বিতীয় অপরাধ, বাংলাদেশে এখন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরছিল। আগেও নানা জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

আচ্ছা অবৈধ অনুপ্র‌বেশ হ‌লে কী কর‌বে বি‌জি‌বি? মাঝে মধ্যে শুনি অবৈধভাবে প্রবেশ করায় বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। কিন্তু বিজিবিকে এমনটা কখনো করতে শুনিনি। খুব স্বাভা‌বিকভা‌বে তারা তিন জেলেকে চ্যা‌লেঞ্জ করে। তখন দুজন পা‌লি‌য়ে যায়। আ‌রেকজন‌কে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়। তার বিরু‌দ্ধে মামলাও হ‌য়ে‌ছে।

প‌রের ঘটনা দে‌খেন। ‌জেলেরা একবার আইন ভে‌ঙে‌ প্র‌বেশ ক‌রেছে। এবার অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ওই জে‌লে‌কে ছাড়া‌তে নিজেদের স্পিডবোট নিয়ে চারঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাইন থেকে প্রায় ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে চলে এলো বিএসএফ সদস্যরা। তারা কার অনুম‌তি নিয়ে ঢুক‌লো?

তা‌দের কাণ্ড দে‌খেন। বিএসএফ সদসরা বিজিবির টহল দলের কাছে এসে আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলেন। বিজিবি টহল দল তখন আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করার কথা বলে। কিন্তু তারা সেটা না ক‌রে ভারতীয় জে‌লেকে বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে তাদের উপর ৬/৮ রাউন্ড গুলি চালায় বিএসএফ।

তখন বিজিবি টহল দল পাল্টা ফাঁকা গুলি করলে বিএসএফ সদস্যরাও গুলি করতে করতে দ্রুত চলে যায়। প‌রে ভারত জানায়, তা‌দের এক জওয়ান নিহত হয়েছেন।

এই ঘটনা কী ভুল বোঝাবুঝি নাকি বিএসএফের বাড়াবাড়ি? আমার কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন। ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে ঢুকে মাছ কেন ধরছিলেন? বাংলাদেশি জেলেরা একই কাজ করলে কী করতেন আপনারা?

দ্বিতীয় প্রশ্ন, বিএসএফ সদস্যরা কেন স্পিডবোট নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করলো? ঘটনার যে ছ‌বি তা‌তে একজনকে দেখলাম হাফ প্যান্ট স্যান্ডেল পরা। বিজিবি বল‌ছে, স্পিড‌বো‌টে বিএসএফের চার সদস্যের মধ্যে একজন বাহিনীর পোশাক পরিহিত থাকলেও বাকিদের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি। তাদের কাছে অস্ত্রও ছিল। ধ‌রে নিলাম তারাও বিএসএফ সদস্য। বিএসএফ বল‌ছে, তারা পতাকা বৈঠক কর‌তে এসেছিলেন। আমার প্রশ্ন, এভাবে হাফপ্যান্ট গে‌ঞ্জি স্যান্ডেল পরে অস্ত্র নিয়ে পতাকা বৈঠ‌কে যাওয়া যায়?

আমার তৃতীয় প্রশ্ন, আগে কে গুলি ছুড়েছিল। বি‌জি‌বি পরিষ্কার করে বলেছে, আগে গুলি ছুড়েছিল বিএসএফ। প‌রে বি‌জি‌বি আত্মরক্ষায় গু‌লি চালায়। বিএসএফ কী বলবে? তাদের ভাষ্য যদি ধরে নেই, আলোচনা করতে এসেছিল তাহলে আগে গুলি ছুড়েছিল কেন?

আমি বলবো কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয় বরং বিএসএফের বাড়াবাড়িতেই এই ঘটনা ঘটেছে। আর তাদের এই বাড়াবাড়ি প্রায়ই ঘটে। আমি বরং বিজিবিকে পেশাদারিত্ত্বের সাথে ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য বি‌শেষ ধন্যবাদ দেব।

ত‌বে সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, কোথাও কোনো প্রাণহাণি কাম্য নয়। সীমান্তে একজন বাংলাদেশির মৃত্যু যেমন ভীষণ বেদনার তেমনি একজন ভারতীয়রও। আমাদের দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীই যেন কথাটা মনে রাখে। আপনারা যারা সীমান্তে সু‌যোগ পেলেই গু‌লি ক‌রেন, গত এক দশকে যারা ৩১৯ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছেন তাদের বলি, ম‌নে রাখ‌বেন সবার রক্ত লাল। সব স্বজনহারার কান্না এক। কাজেই কারও দায়িত্বহীনতা বা বাড়াবাড়িতে যেন একটা মানুষের প্রাণও না যায় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী