কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বেকারত্ব বাড়াবে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৫৮

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমনের ফলে চতুর্থ বিপ্লব শুরু হয়েছে। ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতয়ে বেকারত্ব সংকট নিরসনে সরকারকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার আসিফ শাহরিয়ার সুস্মিত।

গত শুক্রবার বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে তরুণ ইন্টেলেকচুয়ালদের সংগঠন ‘রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট’ আয়োজিত ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী’ শীর্ষক ৩৬০তম সাপ্তাহিক পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসিফ শাহরিয়ার সুস্মিত।   

মেশিন যখন মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দেখায়, সেটিই তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। যুক্তি, সমস্যা সমাধান, মানুষের ভাষা বোঝার ক্ষমতা, উপলব্ধি, শিক্ষণ, পরিকল্পনা, কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটানো বা কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো সামর্থ্যসম্পন্ন মেশিনই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন। 

বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য অনিরাপদ বলে দাবি করেছেন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো খুব সহজেই নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটা নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। উন্নত দেশগুলোতে এসব কোম্পানিকে বিভিন্নভাবে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হলেও বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আগামী দিনগুলোয় চিকিৎসাসেবায়, অফিস-আদালতে, শিল্প-কারখানায়, সংবাদসংস্থা বা গণমাধ্যমে, ভাষান্তর প্রক্রিয়ায়, টেলিফোন সেবায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ এমনকি বিপণি বিতানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র তথা রোবটের ব্যাপক ব্যবহারের আভাস দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ২০৪৯ সালের মধ্যে রোবট বেস্ট সেলার বুক লিখতে সক্ষম হবে। যদিও জাপানে বুদ্ধিমান মেশিনের রচিত ছোট উপন্যাস সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ইতিমধ্যে বিবেচিত হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেছেন, আগামী ১২০ বছরের মধ্যে মানুষের সব কাজ বুদ্ধিমান মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারবে।
 
লেকচারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারা উন্মুক্ত আলোচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতয়ে বেকারত্ব সংকট তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন তারা।

সমাপনী বক্তব্যে রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জুলফিকার ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সরকারি এক জরিপের হিসেবে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৩ লাখ মানুষ চাকুরীচ্যুত হবে। ফলে সরকারি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অতি দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের একটি সংগঠন। ২০১১ সালে ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। ‘সিরিয়াস’ ধারার বইপত্র নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা করা এবং তরুণদের সাহিত্য সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করাই রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের কাজ। 

ইতোমধ্যে রিডিং ক্লাব আয়োজিত ৩০টি মাসিক পাবলিক লেকচার ও ৩৫৯টি সাপ্তাহিক পাবলিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেকচারগুলোতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থনীতিবিদ ও ইতিহাসবিদ আকবর আলি খান, ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম, লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদসহ প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/আরআর