পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতি

ভোলায় স্বার্থান্বেষী মহল অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ২২:৫৭ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:১৫

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

ফেসবুকে অবমাননাকর স্ট্যাটাস ঘিরে ভোলার বোরহানউদ্দিনে স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ ঘটনায়   ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ রবিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি সোহেল রানার স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য বিবৃতিতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

এর আগে আজ সকালে বোরহানউদ্দিনের উপজেলা ঈদগাহ ময়দানে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়। হতাহতের এ ঘটনায় সমবেদনা জানানো হয় বিবৃতিতে।

তাতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ঘটনা সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের  বিভ্রান্তি এড়াতে পুলিশ সদর দপ্তর প্রকৃত ঘটনা জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছে। বিবৃতিটি প্রায় হুবহু নিচে তুলে দেওয়া হলো:

গত ১৮ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ 'Biplob Chandra Shuvo’ নামে নিজ ফেইসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার প্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবক রাত ৮.০৫ টায় ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডি নং-৪৪০, তারিখ-১৮ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সে ওসিকে জানায়। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী ও বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বোরহান উদ্দিন থানায় আনা হয়।

ইতোমধ্যে শুভর ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উত্তেজিত হতে থাকেন। ফেইসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করেন স্থানীয় আলেম সমাজ। পরদিন ২০ অক্টোবর (রবিবার) সকাল ১১টায় ঈদগাহ মাঠ ময়দানে তারা প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার অফিসার ইনচার্জ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের  উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ১৯ অক্টোবর (শনিবার) সন্ধ্যায় বোরহানউদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় বিষয়টি আলোচনা হয়। আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে আটক দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা করেন।

সমাবেশ বাতিলের ঘোষণা সত্ত্বেও পুলিশ সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকে। পরদিন (রবিবার) সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক আনে একটি মহল। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমগণ নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবে না। ইতোমধ্যে, এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ভোলায় আসেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি ও ইউএনওকে নিয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে তাদের বারবার আশ্বস্ত করেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ্ ময়দান ত্যাগ করেন। উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন।

এরই মধ্যে, অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকেন। তারপর, সহসাই একদল লোক বিনা উস্কানিতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ করে। আক্রমনকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণকারীদের গুলিতে পুলিশের একজন মারাত্মক জখম হয়। মারাত্বক আহত হন পুলিশের আরেক সদস্য। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিও আহত হন।

এই পরিস্থিতিতে, ইউএনও ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আক্রমণকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দুজনের মাথা ভোতা অস্ত্র দ্বারা থ্যাতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ থেকে একজন করে মোট চারজন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে, পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করলেও কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে এবং কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি, গুজবে কান না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/মোআ)