খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিতে আগ্রহ নেই শাহজালাল ব্যাংকের

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৩৮ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৩৭

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার সরকার নির্দেশিত কর্মসূচিতে আগ্রহ নেই শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। ফলে কৃষি ঋণ বিতরণে গত তিন মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৯৮ শতাংশ পিছিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমার চেয়ে বেশি হারে সুদ নিচ্ছে ব্যাংকটি। নির্ধারিত সুদহারের অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা ও পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সব বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং তা অনুসরণ করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কৃষিতে বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ২৭ কোটি টাকায় অতিরিক্ত সুদ নিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বাস এগ্রো ফিশারিজের কাছে ২৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ১০ শতাংশ সুদে। আর বকুল মৎস্য খামারিকে ২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে একই হারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে ২৭ লাখ টাকা গ্রাহককে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা ও পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছর ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এরই ধারাহিকতায় প্রতি বছর বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণের হার। ফলে কৃষিতে অর্থ সরবরাহ বাড়ছে। এক দশকে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।  চলতি অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ভিত্তিক সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে দেখা যায়, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে চলতি অর্থবছরে কৃষিতে ঋণ বিতরণের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৮৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু গত তিন মাসে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে মাত্র ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মাত্র ১.৯৫ শতাংশ।

যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে শাখা নেই তাদের কৃষি ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে বিকল্প ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তারা এমআরএ অনুমোদিত এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও সুদহার ৯ শতাংশ।

কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে থাকা এবং বেশি হারে সুদ নেওয়ায় শাহজালাল ব্যাংকের প্রতি অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংক। এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাড়াতে এবং কৃষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রায় সব ব্যাংক এ কর্মসূচিতে সহায়তা করছে। কিন্তু শাহজালাল ব্যাংকের গত তিন মাসের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। এমনকি তারা বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করায় গ্রাহককে বাকি অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে এসএমএস করলেও এর কোনো জবাব দেননি তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/মোআ)