ঢাবি বিতর্ক সংসদে ভোটার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৩

আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের নির্বাচন। এতে ভোটার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার বিরুদ্ধে। রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনেরই একাধিক সদস্য এই অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের নির্বাচনে হল থেকে ভোটার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংসদটির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন অধ্যাপক জিনাত হুদা। তিনি নিয়মবহির্ভূত এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন যে প্রক্রিয়াটি বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রসম্মত নয়। অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এবং ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের অনুরোধেই জিনাত হুদা এটি করেছেন।

সূত্র জানায়, আগামী ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিতর্ক সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে একজন ভোটার নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য হল শাখাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল থেকে একজন করে ভোটার নিয়োগ করা হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ বা বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর ভোটার মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এদের ভোটেই নির্বাচিত হন বিতর্ক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। হল প্রশাসন বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রত্যেক হলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ করা হয়। এর বাইরে অন্য কাউকে মনোনীত করতে হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারা অনুসারে হল বিতর্ক ক্লাবের সবার সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মনোনয়ন দিতে হয়। কিন্তু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রের ২৭নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক হল ডিবেটিং ক্লাব থেকে একজন করে ভোটার ভোট দিতে পারবেন। হল ডিবেটিং ক্লাব ভোটারের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট দিনে ডিইউডিএস কার্যালয়ে জমা দিবে। ভোটারের নাম প্রেরণের কাগজে অবশ্যই হল প্রাধ্যক্ষ বা মডারেটরের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ছাত্রত্ব থাকা সাপেক্ষে ভোটারকে স্ব স্ব ডিবেটিং ক্লাব থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।’

রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের বর্তমান কমিটির একাধিক বিতার্কিক অভিযোগ করেন, হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা ক্লাবের কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে ‘সৌমি সপ্তপর্ণা’নামে একজনকে ভোটার হিসেবে মনোনীত করেছেন। তিনি ছাত্রী হল বিতর্ক ক্লাবে অনিয়মিত। এর আগে হল বিতর্ক অঙ্গনের নির্বাচনের সময় তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সভাপতি না হতে পেরে তিনি বিতর্ক অঙ্গনে না আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ভোটার হওয়ার বিষয়টি সামনে এলে সম্প্রতি তিনি আবার নিয়মিত হন।

রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের সাবেক কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ‘ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের পরামর্শে হল প্রাধ্যক্ষ এই কাজ করেছেন। শয়ন তার বান্ধবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে ডিইউডিএসের সভাপতি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এর আগে, রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের নতুন কমিটি দেয়ার সময় সেখানে তিনি তার অনুগত সৌমি সপ্তপর্ণাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিতার্কিকদের বাধায় সেটা পারেননি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাজহারুল কবির শয়ন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইউডিএস-এর নির্বাচন কবে তা আমি জানি না।’ বান্ধবীকে সভাপতি করতে তোড়জোড় করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভা কে?’ বান্ধবীর পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে সে অন্য কারো বান্ধবী, কারো প্রেমিকা, কারো বউ, কারো মা।’

এই বিষয়ে বিতর্ক সংসদের নির্বাচন কমিশনার এসএম রাকিব সিরাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাধারণ বিতার্কিকদের কাছ থেকে আমরা এই ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্তের দিকে যাব।’

বিতর্ক সংসদের নির্বাচন কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মুতি আসাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, সেক্ষেত্রে এই হলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে।’ তবে এখনো অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরে কিছুটা শান্ত হয়ে বলেন, ‘নিয়মের বাইরে আমরা কিছু করিনি। নিয়ম মেনেই আমরা চিঠি দিয়েছি।’

গঠনতন্ত্রের ধারার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্র আমি কম বুঝি না।’

এদিকে, গতকাল দুপুরে বিতর্ক সংসদের বার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবিতে সংসদের সাধারণ বিতার্কিকরা ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিতর্ক সংসদের উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা আসবে কেন। শিক্ষার্থীদেরকে মডারেটরের সঙ্গে কথা বলে রীতি-নীতি, ঐতিহ্য অনুসরণ করে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’ এখানে দুষ্ট চক্রের কাজ করার সুযোগ নেই বলেও জানান উপাচার্য।

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এমআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :