ধর্ষক নয়ন গ্রেপ্তারের পরও কারাবন্দি কলেজছাত্র নয়ন

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১১ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিনা অপরাধে ২৫ দিন ধরে কারাবন্দি বাবুল হোসেন নয়ন নামের এক কলেজছাত্র। ১৫ দিন আগে প্রকৃত আসামি নয়ন মিয়া গ্রেপ্তার হলেও নির্দোষ বাবুল হোসেন নয়ন এখনো ছাড়া পায়নি।

বিনা দোষে কারাবন্দি বাবুল হোসেন নয়ন উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে। প্রকৃত অপরাধী নয়ন মিয়া বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে।

সখীপুর উপজেলার সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলতি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল বাবুল হোসেন নয়নের। কিন্তু ‘নয়ন’ নাম কাল হলো তার। স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে করা এক মামলার আসামি নয়ন মিয়া ভেবে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। আর তাতে পরীক্ষা দেওয়া হলো না তার।

প্রকৃত অপরাধীর জায়গায় ২৫ দিন ধরে টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দি বাবুল হোসেন নয়ন। ছেলের মুক্তি না মেলায় ভেঙে পড়েছেন তার অসহায় পরিবারের সদস্যরা। ক্ষুব্ধ হচ্ছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সখীপুর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া এক স্কুলছাত্রী বাসাইল উপজেলার চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের চার দিন পর টাঙ্গাইল ডিসি লেকের পাশ থেকে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। সে নয়ন নামের এক ছেলের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানায় পরিবারকে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়নকে আসামি করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ বাবুল হোসেন নয়নকে গ্রেপ্তার করে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি তাকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ সময় বাবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চেনেন না এবং কক্সবাজারে যাননি বলে দাবি করেন। কিন্তু মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে পুলিশ বাবুল হোসেনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠালে আদালত জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও বাবুল হোসেন নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরে মেয়েটির কাছ থেকে পাওয়া কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে তদন্ত করা হয়।’

ওই ভিজিটিং কার্ডের মোবাইল ফোন নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন,  ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ঘটনার আসল আসামি নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নয়ন মিয়া ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’

নিরপরাধ বাবুল হোসেন নয়নের বাবা শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমার নির্দোষ ছেলেটা জেল খাটছে। অনেক কষ্ট করে ছেলেটিকে কলেজে পড়াচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা মামলার কারণে আমার ছেলেটা পরীক্ষা দিতে পারেনি।’ নয়নের দ্রুত মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বলেন, তদন্তে বাবুল হোসেন নয়ন নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃত আসামি নয়ন মিয়াকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাবুল হোসেন নয়নের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ অক্টোবর জামিন শুনানি হবে। ওই দিন বাবুল হোসেনের জামিনে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/মোআ)