দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে ইন্দুরকানীর সুপারি

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর
 | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৬

দক্ষিণাঞ্চলে ধানের পরেই দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে সুপারির স্থান। লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হিসেবে এই অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারির চাষ হয়। এই অঞ্চলে সুপারি উৎপাদনে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা একটি প্রসিদ্ধ নাম। এই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার কাঁচা-পাকা সুপারি চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু দেশেই নয়, এই সুপারি এলসির মাধ্যমে যাচ্ছে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে।

সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কাঁচা- পাকা সুপারি কেনাবেচা চলে। কেউ কেউ আবার সুপারি কিনে শুকিয়ে টাডি তৈরি করেও বিক্রি করে থাকেন। আর সেইসব শুকনো সুপারি বেচাকেনা চলে সারা বছর ধরে।

এই উপজেলায় চন্ডিপুর হাট, ঘোষেরহাট, পত্তাশী, বালিপাড়া, বটতলা, পাড়েরহাট, লাহুরী, কালিবাড়ি এবং ইন্দুরকানী সদরে সপ্তাহে দুই দিন করে সুপারি কেনাবেচার হাট বসে। এর মধ্যে সুপারি বেচা-কেনার সবচেয়ে বড় মোকাম হচ্ছে চন্ডিপুর, ঘোষেরহাট ও পত্তাশী বাজার।

এই উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নের ১৩টি হাট বাজারের মধ্যে নয়টি বাজারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। হাটের দিনে সকাল থেকেই এসব বাজারে শত শত সুপারি চাষি ও সাধারণ পরিবারের মানুষ বস্তা ও ঝুড়িতে করে সুপারি নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। কেনাবেচা চলে বিকাল পর্যন্ত।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় পাইকার ও বেপারিরা এসব হাটে আসেন সুপারি কিনতে। কেনাকাটা শেষে পাইকাররা দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রাক ও ট্রলার যোগে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপারি চালান করেন।

গত বছরের তুলনায় এবার সুপারির ফলন বেশি। সেই সঙ্গে দামও ভালো হওয়ায় (তুলনামূলক বেশি) চাষিরাও বেশ খুশি। এবার মৌসুমের শুরুতে প্রতি কুড়ি (২১০টি) পাকা সুপারি স্থানীয় বাজারে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজার কিছুটা কমে ২৫০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। আর কাঁচা সুপারি ১২০ টাকা থেকে দেড়শ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শ্রেণিভেদে কমবেশি হয়ে থাকে কাঁচা-পাকা দুই ধরনের সুপারি দাম।

এছাড়া শুকনো সুপারি প্রতিমণ এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে পাইকারি মোকামগুলোতে।

এদিকে, কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সুপারি গাছের। তখন বেসরকারি হিসেবে দেখা গেছে সিডরের কারণে বড় বড় গাছ চাপা পড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ সুপারি গাছ মারা যায়। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও প্রায় ২৫ শতাংশ গাছ। তবে গেল এক যুগে প্রতিটি গ্রামেই সুপারি চাষ বেড়েছে। এছাড়া, নতুন সুপারি বাগানের সংখ্যাও বেড়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের সুপারি চাষি দিবাকর দত্ত পুলিন সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের তুলানায় এবার দাম একটু কম থাকলেও ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া, চন্ডিপুর হাটের সুপারি বেপারি আক্তার হোসেন, মো. জাহিদ গাজী, মিল্লাদ ও শাহজাহান আকন জানান, ফলন ভালো হওয়ায় এবার হাটে সুপারি কেনাবেচা বেশি হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও সন্যাসী থেকে চন্ডিপুর হাটে সুপারি কিনতে আসা ব্যাসায়ী আলম ও সোহরাব জানান, এবছর সুপারির বাজারদর গতবছরের চেয়ে কিছুটা কম। তবে গেল বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেকটা ভালো। দাম কিছুটা কম থাকলেও ফলন বেশি পাওয়ায় চাষিরা অনেক খুশি। শুধু চন্ডিপুর হাট থেকেই দুই থেকে তিনশ বস্তা সুপারি প্রতি হাটে কিনে নিয়ে যান বেপারিরা।

ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা সিদ্দিকা ঢাকা টাইমসকে বলেন, সুপারি এই অঞ্চলের একটি অর্থকরী ফসল। উপজেলার প্রতিটি বাড়িতেই কমবেশি সুপারি চাষ করছে। এবার ফলনও অনেক ভালো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/জেবি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :