বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশা

নরসিংদীতে মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
 | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪২

চলতি বছরেই শুরু হওয়ার কথা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। চারলেনের এই মহাসড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা হবে সড়কের পাশের জমি। এই খবরে বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় নরসিংদীতে মহাসড়কের পাশে রাতারাতি গড়ে উঠছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় একাধিক চক্র কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে গড়ে তুলছে ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থাপনা।

অবৈধ এসব স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেকে) অনুমোদন হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের নরসিংদী অংশে রয়েছে ৫২ কিলোমিটার এলাকা। চলতি বছর থেকেই শুরু হওয়ার কথা চারলেনের কাজ। এরই মধ্যে এই মহাসড়কটি ছয় লেনের কথা শোনা গেলেও তা এখনো নিশ্চিত নয়। মহাসড়ক আইন অনুযায়ী সড়কের উভয় পাশের ১০ মিটার দূরত্বে স্থাপনা তৈরির নিয়ম রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের সময় সরকার থেকে বাড়তি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় মহাসড়ক ঘেষে উভয় পাশে গড়ে তোলা হয়েছে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বাড়িঘর, মার্কেট ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। ৫/৬ মাস ধরে চলছে বহুতল বিশিষ্ট এসব অবৈধ স্থাপনা তৈরির কাজ। স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার পরও চলমান রয়েছে বেশকিছু ভবন তৈরির কাজ। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী চক্র এসব স্থাপনা তৈরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে রাতারাতি গড়ে উঠা এসব স্থাপনার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব স্থাপনা তৈরির ফলে অধিগ্রহণের সময় গচ্ছা যেতে পারে সরকারের ক্ষতিপূরণের বাড়তি অর্থ।

সরেজমিনে মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার চৈতন্যা এলাকার একটি ভবন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিনতলা এই ভবনটির মালিক শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুর রশিদ খান তাপসের স্ত্রী। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে নিজে এটি তদারকি করছেন। কারখানা গড়ে তোলার জন্য ভবনটি তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান এই শ্রমিক।

অপর এক নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিক জানান, এটা চারতলা ভবন হবে, নিচে গরুর ফার্ম হবে, উপরে কমিউনিটি সেন্টার, আন্ডারগ্রাউন্ডে হবে গরুর ফার্ম। ভাড়াও দেয়া হতে পারে। এক মাস আগে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন ধরে রাতারাতি এসব বিল্ডিং উঠছে। একতলা থেকে চার তলাবিশিষ্ট এসব ভবন করা হচ্ছে বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায়। এতে মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণের সময় সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। লাভবান হবে এসব চক্র।

যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার ঢাকা টাইমসকে বলেন, সড়কের পাশে আগের অবস্থা ভিডিও রেকর্ডিং করে প্রকল্প পরিচালক দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। চলমান এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে ১৬৪টি স্থাপনা মালিককে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও পৌর কর্র্র্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। মহাসড়ক আইনের শর্ত উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার কথা জানিয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার লোকজন পাঠিয়ে একটি প্রতিবেদনের মতো (ভিডিওসহ) সাবমিট করেছি। এটা হাইকমান্ড বরাবর পাঠিয়েছি। নিয়ম হলো এটা ক্যাবিনেট স্যার বরাবর পাঠাতে হয়, আমরা তা পাঠিয়েছি। আর বিল্ডিংগুলোর বিষয়ে আমাদের পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ অনুমোদন দিয়ে থাকে। আমি গত উন্নয়ন সমন্বয় মিটিংয়ে বলে দিয়েছি পৌরসভা এবং উপজেলা যাতে আবশ্যিকভাবে অনুমোদনবিহীন বিল্ডিংগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করে।’

ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :