গভর্নিং বডির নির্বাচনের নামে এমন প্রতিযোগিতা অস্বাভাবিক
রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা স্কুলের গভর্নিং বডি ও অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে যে মাত্রার প্রচার প্রচারণা ও অর্থব্যয় হচ্ছে সেটি কোনো অর্থেই ইতিবাচক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
স্কুলের নির্বাচনকে ঘিরে এমন আগ্রহকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সুশীল সমাজের এ প্রতিনিধির ভাষ্য, ‘এটা তো অস্বাভাবিক ঘটনা। আমিও গ্রামের একটি স্কুল এন্ড কলেজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এমন তো আগ্রহ দেখিনি। তবে এখানে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলেই এমন প্রতিযোগিতা বলে আমি মনে করছি।’
শুক্রবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভনিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে আবহে আমেজে প্রচারে জাতীয় নির্বাচনের মতোই সাড়া সৃষ্টি করেছে স্কুলটির নির্বাচনী কার্যক্রম। বেইলি রোডের মূল শাখাসহ প্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখা এলাকার পাশাপাশি আশপাশের মূলসড়ক, অলিগলি ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার, ফেস্টুনে।
অনেকে আবার নিয়মিত ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে অভিভাবকদের ভোট দেয়ার অনুরোধ করছেন। অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে উপহারও তুলে দিচ্ছেন কেউ কেউ। এসব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এমনকি প্রার্থী হতে জামানত হিসেবে দিতে হয়েছে ত্রিশ হাজার টাকাও। এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভনিং বডির সদস্য হতে এমন প্রতিযোগিতা অস্বাভাবিক। অর্থনৈতিক লোভ লালসার জায়গা থেকে এমনটা করা হচ্ছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর্থিক লাভ আছে বলেই এত ব্যয়ে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক এক শ্রেণির অভিভাবকরা।এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির গর্ভনিং বডির প্রতিনিধি বাছাই করবেন চার শাখার ২৪ হাজারের মত ভোটার। আজ অনুষ্ঠিত হবে ভোট। নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতিসহ ১১ সদস্যের গভর্নিং বডিতে থাকবেন চার শিক্ষকসহ ছয় জন অভিভাবক। তবে শিক্ষকদের তেমন প্রভাব দেখা না গেলেও ৬ জন অভিভাবক প্রতিনিধির বিপরীতে লড়ছেন ২৭ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার লোকজন।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভনিং বডির নির্বাচনকে ঘিরে এমন আয়োজনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুদমার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখানে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলেই এমন প্রতিযোগিতা। এত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিতরা প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের থেকেও বেশি নজর দিয়ে থাকবেন সুযোগ সুবিধা কি পাওয়া যায়, সেদিকে।’ ‘কারণ গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখি এরা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির সঙ্গে জড়িত থাকেন, শিক্ষক নিয়োগ করে থাকেন। এসব বন্ধ করতে হবে।’
রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তিসহ বিভিন্ন কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এরসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের গভনিং বডির সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও আছে।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু সঙ্গত কারণেই সেটা সম্ভব হয় না। কারণ ভিতরের চিত্রটা ভিন্ন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কেউ কেউ এই পদে এসে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।’
যারা শিক্ষার মান উন্নয়নে কি কাজ করা সেটা নিয়ে ভাববেন তারা দুর্নীতিতে জড়ালে প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান ঠিক থাকে না এমন মন্তব্য করে বলেন, ‘এসবের প্রভাব পরে পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপর।’
(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/বিইউ/ডিএম)