ঝুটের সুতোয় ঘুরছে জীবন চড়কা

এনাম আহমেদ, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ২২:২৩

শীত মৌসুম উপলক্ষে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শাওইল গ্রামের মানুষদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এখন বাড়তি রোজগারের সময়। তাই এই গ্রামের সব বয়সী মানুষ গার্মেন্টসের বাতিল সুয়েটার থেকে নাটাইয়ে সুতা সংগ্রহে ব্যস্ত। আর তাঁত কারিগরদের মাঝে ধুম পড়েছে হ্যান্ডলুম এবং পাওয়ার লুম চালিয়ে শীতের গরম পোশাক তৈরিতে। এসব সুতা এবং শীতের গরম পোশাকগুলো বিক্রি হবে শাওইল বাজারে।

শাওইল গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে সব বয়সী নারী-পুরুষকে সুতা হাতে নাটাই আর হ্যান্ডলুম ধরে মনোযোগসহ কাজ করছেন। শুধুমাত্র এই গ্রামেই প্রায় ছয় হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত। এর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। একদিনে একজন নাটাই ঘুরিয়ে সুতা সংগ্রহ করতে পারেন তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি সুতা। সংসারের কাজের পাশাপাশি নারীরা সকাল ৮টা থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত চড়কা ঘুরানোয় ব্যস্ত থাকেন। আর বাড়ির কর্তারা বেরিয়ে যান আগের দিন সংগৃহিত সুতা হাটে মহাজনদের দেয়ার জন্য। চুক্তি অনুযায়ী তারা প্রতি কেজি সুতার মূল্য পান ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাড়ি ফিরে তারাও চড়কা নিয়ে বসে যান।

প্রতি রবি ও বুধবার শাওইল বাজারে হাটের দিন। এই দুই দিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। প্রসেস করা এসব সুতা ও সুতার তৈরি বস্ত্র রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে সুতা ও উলের তৈরি চাদর, মাফলার নিয়ে যান।

আব্দুল হামিদ শেখ ঢাকা টাইমসকে জানান, তিনি ও তার স্ত্রী দিনে পাঁচ থেকে সাত কেজি সুতা সংগ্রহ করেন। পরদিন সেগুলো মহাজনের কাছে বিক্রি করেন প্রকারভেদে ১৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তারা প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত।

শাওইল বাজারের সুতা ও ঝুট ব্যবসায়ী ইউনূস আলী পলাশ ঢাকা টাইমসকে জানান, তারা গার্মেন্টসের বাতিল ঝুট কিনে এনে গ্রামের মহিলা ও পুরুষদের দেন নাটাই করার জন্য। এরপর সেটাকে প্রসেস করার পর বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে সুতা কেনেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টসেও এসব সুতা সরবরাহ করা হয়। এই সুতাগুলো প্রকারভেদে ৫০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ২০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়।

আদমদীঘির নশরৎপুর ইউনিয়ন তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, ১৯৯০ সাল থেকে শাওইল বাজার শুরু হয়। এই বাজারকে কেন্দ্র আদমদীঘি উপজেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ কর্ম করতে পারছে। বছরে এখানে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়। এখানকার পণ্য মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হয়। তবে এখানে বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। যেমন এর আগে এখানে কোন ব্যাংক ছিল না। মুরইল গিয়ে লেনদেন করতে হতো। এখন ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখানে একটা ব্যাংকের শাখা দরকার। এছাড়া এই হাটে কোন শেড নেই। যেখানে ব্যবসায়ীরা দাঁড়িয়ে বা বসে ব্যবসা করবে। খোলা আকাশের নিচে ব্যবসা করতে সমস্যা হয় বর্ষার সময়। এছাড়া এই হাটে প্রবেশের জন্য যে রাস্তা সেটা খুব প্রশস্ত নয়। যে কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা ট্রাক নিয়ে এসে বিপাকে পড়েন। কারণ প্রতি হাটের দিন হাটের চার পাশে ভিড় করে শত শত ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা-ভ্যান। এই সমস্যাগুলোর সমাধান হলে এখানকার ব্যবসার পরিধি আরো বাড়ত।

(ঢাকাটাইমস/২৫অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :