আসছে অতিথি পাখি

চলনবিলে পাখি নিধন চলছে অবাধে

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৪ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৯

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

এখনো শীত আসেনি। তবে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের আধার চলনবিলে। কিন্তু অতিথি পাখি এসে স্থিত হওয়ার আগেই এসব পাখি নির্বিচারে নিধন চলছে। শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক, বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি শিকার করছেন। এতে একদিকে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণও বাড়ছে।

রাজশাহী বিভাগের পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার নয়টি উপজেলার সমন্বয়ে চলনবিল অঞ্চল বিস্তৃত। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১৪টি নদী ও ২২টি ছোট-বড় বিল। নিম্ন জলাভূমিতে এই মৌসুমে পানি শুকিয়ে আসায় ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও অতিথি পাখি এসে ভিড় জমায়।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, অল্প পানিতে খাবার সংগ্রহের জন্য শীতের আগেই অনেক দেশি ও অতিথি পাখি চলনবিলে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রচুর মাছও দেখা যাচ্ছে।

ফলে ঝাঁকে ঝাঁকে চখাচখি, পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, ইটালি, শর্লি, পিঁয়াজ খেকো, ত্রিশূল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাঁদোখোচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, শামুখখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি বসতে শুরু করেছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারি বন্দুক, বিষটোপ, কারেন্ট জাল ও ফাঁদ পেতে প্রতিনিয়ত পাখি শিকার করছে। প্রকাশ্যে এসব পাখি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন পেশাদার পাখি শিকারি ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কোনো মতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। 

প্রতি জোড়া পাখি প্রজাতিভেদে একশ পঞ্চাশ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ফলে বেশি লাভের আশায় অনেকেই মাছ ধরা বাদ দিয়ে পাখি শিকার করছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলা সদর থেকে দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে এই এলাকাতে শিকারিদের আনাগোনাও বেশি। আর এসব দুর্গম এলাকাতে প্রশাসনের কোনো লোকজনও তেমন আসেন না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না, প্রকৃতির ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। কিন্তু আইন থাকলেও পাখি নিধন বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে দেশ থেকে নানা প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দি বার্ড সেফটি হাউস চেয়ারম্যান মি. মামুন বিশ্বাস ঢাকা টাইমসকে বলেন, পাখি শিকার জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু পাখি নয় বন্য প্রাণী রক্ষায় যে যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম কাগজে কলমে বন্য প্রাণীর নাম জানতে হবে।

ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর