নুসরাত হত্যার ফাঁসির আসামি

কনডেম সেল থেকে রেহাই পাবে মনি?

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১০:১২

আমিনুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৬ আসামির একজন হলেন সদ্য মা হওয়া কামরুন নাহার মনি। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় চার দিনের কন্যাশিশু কোলে নিয়ে মনি তার সাজার রায় শোনেন। এর আগে গত ২১ অক্টোবর কারাগারে মা হন তিনি।

কারাবিধি অনুযায়ী রায়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামির জায়গা হয় কনডেম সেলে। মনিরও তা-ই হওয়ার কথা। স্বভাবতই সেখানে তার শিশুসন্তানকে রাখার সুযোগ নেই। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে মনির শিশুসন্তানটি কোথায় থাকবে। শিশুটি কি মায়ের স্বাভাবিক লালনপালন থেকে বঞ্চিত হবে? আইন ও জেলকোড বিধান কী বলছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতে আবেদন করলে মনির বাচ্চার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন। আর নানা প্রক্রিয়া পেরিয়ে সাজা কার্যকরের সময় হতে হতে বাচ্চাটি ততদিনে বাবার জিম্মায় যাওয়ার মতো বড় হয়ে যাবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীনের আইনি পেশার জীবনে এ ধরনের ঘটনা বিরল। তিনি মনে করেন, মনি তার শিশুর ব্যাপারে হাইকোর্টে আবেদন করলে হয়তো আদালত বিবেচনা করতে পারে।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত কপি এখনো প্রকাশিত হয়নি। রায়টি প্রকাশিত হওয়ার পর কপি পড়ে বুঝতে পারব এ মামলায় কার কী অপরাধ। কোন আসামির কতটুকু সম্পৃক্ততা।’

নুসরাত হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ এর আগে খুব একটা দেখেননি উল্লেখ করে এই আইনজীবী নেতা বলেন, ‘মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ ছাত্রীর সঙ্গে এ রকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ করবে এমনটি ভাবলে গা শিউরে ওঠে। আর মনির শিশু বাচ্চাটির ব্যাপারে হাইকোর্টে আবেদন করলে হয়তো আদালত বিবেচনা করতে পারে।’

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ মনে করেন উচ্চ আদালতে আবেদন করলে মনি কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে বসবাসের অনুমতি পেতে পারে।

কয়েক দিনের একটি শিশু বাচ্চাকে নিয়ে কনডেম সেলে থাকা সহজ বিষয় নয় উল্লেখ করে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত হলেও এ মামলার আসামি কামরুন নাহার মনিকে জেলকোড অনুযায়ী বিবেচনা করতে পারে। মনির শিশুটির লালনপালনের জন্য হাইকোর্টে একটি আবেদন করতে হবে। সেটি বিবেচনায় নিয়ে মনিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে বসবাসের সুযোগ দিতে পারে আদালত।’

সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের বিবেচনার বিষয়টি দ-বিধিতে আছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। যদি কোনো মহিলা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ফাঁসির সাজা পান তাহলে তার মৃত্যুদ- স্থগিত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু এখানে মনি অন্তঃসত্ত্বা নন।

শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘তার কোলে একটি শিশু বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাটির লালনপালনের কথা চিন্তা করে মনির কনডেম সেল বিবেচনা করতে পারেন আদালত। হাইকোর্ট এই শিশু বাচ্চাকে লালনপালন করার জন্য মনিকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। যদিও আইনে এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই, তবে আদালত তার সহজাত ক্ষমতাবলে মনির বাচ্চাকে লালনপালন করতে সুবিধা দিতে পারে।’

বাচ্চা এখন ছোট হলেও মনির শাস্তি কার্যকরে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান

বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু। কারণ হিসেবে তার ভাষ্য, ‘রায় কার্যকরের প্রক্রিয়াটি শেষ করতে আরও অনেক সময়ের প্রয়োজন। কয়েক বছর লাগতে পারে। এ সময়ের মধ্যে কামরুন নাহার মনির বাচ্চা বড় হয়ে যাবে। বাচ্চা তার পিতার জিম্মায় চলে যেতে পারবে। কামরুন নাহার মনির শাস্তি কার্যকর হতে কোনো বাধা থাকবে না।’

নিহত নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী কামরুন নাহার মনি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় তার সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা থাকায় অবস্থাতেই মনি মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকা-ে অংশ নেন।

নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ রায় ঘোষণা করেন। এ  সময় সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অন্য আসামিরা হলেন-নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/মোআ)