ভোলার সহিংসতার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা

ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংসতার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিকের কাছে ১৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন জমা দেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

এ কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগ ভোলার উপ-পরিচালক মামুদুর রহমান। বাকি সদস্যরা হলেন ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আতাহার মিয়া ও সদর সারকেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসিন আল ফারুক।

মামুদুর রহমান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তিনদিন মেয়াদের কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। পরে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে দুই দিন সময় বাড়িয়ে পঞ্চম দিনে জমা দেয়া হলো।’

তবে প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না বলার বিষয়ে উচ্চ আদালতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘আমি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। যথাযথ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা প্রেরণ করা হয়েছে।’

বোরহানউদ্দিনের সহিংসতার ঘটনায় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজিকে প্রধান করে পুলিশও আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে। এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

‘নিহত চারজনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা’

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত চারজনের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল নিহতদের পরিবারের হাতে সহায়তার অর্থ তুলে দেন।

এমপি মুকুল বোরহানউদ্দিনে তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভোলার অভিভাবক সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মুকুল বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত টিমের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত টিমের রিপোর্ট অচিরেই পাওয়া যাবে।’

‘পুরো ঘটনাটিকে নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ এ সময় তিনি দোষিদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সাংবাদমাধ্যমের সহায়তাও কামনা করেন।

ভোলা সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে এমপি মুকুল বলেন, ‘নিহতদের পরিবারকে মানবিক সহায়তা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সাহায়তা দেয়াসহ সবগুলো দাবিই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’

উল্লেখ্য, এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর মুসলিম তাওহিদী জনতার ব্যানারে গত রবিবার ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরে একটি সমাবেশ ডাকা হয়। সেখান থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় কয়েকশ মানুষ। দফায় দফায় সংঘর্ষে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ চারজন নিহত হন। আহত হন ১০ পুলিশসহ শতাধিক।

পরে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার বিকালে ওই তরুণের ফেইসবুক আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ একটি মেসেজ তার কয়েকজন ফেইসবুক বন্ধুর কাছে যায়। এক পর্যায় কয়েকটি আইডি থেকে ‘মেসেজটির স্ক্রিনশট ফেইসবুকে ছড়ানো’ হয়। এরপর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ‘ফেসবুকে প্রতিবাদ শুরু হয়।’

এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর সেই হিন্দু যুবক বিপ্লবচন্দ্র বৈদ্য শুভ বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি করতে যায় বলে জানায় পুলিশ। শুভসহ পাঁচজনকে সংঘাতের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা টাইমস/২৬অক্টোবর/ডিএম