চিপসের প্যাকেটে ‘প্রাণঘাতী’ খেলনা

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০০

সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের ছোট-বড় সব বাজারের দোকানগুলোতে এখন বিভিন্ন কোম্পানির চিপসসহ নানা রকমের শিশুখাদ্যে সয়লাব। চিপসসহ এসব খাদ্যের বিক্রি বাড়াতে এবং শিশুদের এসবের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে প্যাকেটের ভেতর দেয়া হচ্ছে অতিক্ষুদ্র আকৃতির হাতি, ঘোড়া-কুমিরসহ নানা রকমের বাহারি খেলনা। পাশাপাশি টেলিভিশনে এসব খাদ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। আর সেসব দেখে শিশুরা জানতে পারছে কোন কোম্পানির চিপসের ভেতর কি ধরনের খেলনা থাকছে। ফলে অভিভাবকদের এসব কিনে দিতে বাধ্য করছে শিশুরা। অভিভাবকরা তাদের শিশুদের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে এসব কিনে দিচ্ছেন। অথচ অভিভাবকরা একবারের জন্য ভাবছেন না এসব খেলনা শিশুদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। ক্ষুদ্র আকৃতির খেলনা হাতি, ঘোড়া-কুমির মুখে দিলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকার এক শিশুর গলায় খেলনা কুমির আটকে যায়। পরে শিশুটির অভিভাবক দ্রুত ভালুকা মাস্টার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে ওই হাসপাতালের পরিচালক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুশফিকুর রহমান প্রায় আধঘণ্টা চেষ্টার পর খেলনা কুমিরটি শিশুর গলা থেকে বের করে আনতে সমর্থ হন।

ডা. মুশফিকুর রহমান জানান, এ যাত্রায় শিশুটি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। তবে নাম ঠিকানা জানার পূর্বেই শিশুটির চিৎকার চেঁচামেটিতে শিশুটির মা-বাবা দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, এসব ক্ষুদ্র খেলনা যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এসব খেলনার ব্যাপারে সকল শিশুর অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি।

গফরগাঁও উপজেলার বাগবেড় গ্রামের এনামুল হক জানান, গত তিন অক্টোবর বাড়ি যাওয়ার জন্য গফরগাঁও রেলস্টেশন সংলগ্ন অটোরিকশা স্ট্যান্ডে সাত বছরের ছেলে সামিতকে নিয়ে অপেক্ষ করছিলাম। এ সময় সে চিপস খাওয়ার বায়না করে। বাধ্য হয়েই দোকান থেকে একটি চিপসের প্যাকেট কিনে দেই। তখন সামিত চিপস খাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত চিপসের ভেতরে থাকা ছোট্ট একটি খেলনা গলায় আটকে যায়। সে সময় ময়মনসিংহগামী আন্তঃনগর অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গফরগাঁও রেলস্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। আটকে যাওয়া খেলনার ব্যথায় আমার ছেলে চিৎকার করছিল। তখন স্ট্যান্ডে থাকা অন্য যাত্রীদের পরামর্শে ওই অগ্নিবীনা ট্রেনযোগে ছেলেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বেশ চেষ্টার পর চিকিৎসকরা খেলনাটি বের করতে সক্ষম হন। এরপর থেকে এখনো ছেলেকে নরম খাবার খাওয়াতে হচ্ছে।

গফরগাঁওয়ের স্কুল শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সানি বলেন, টেলিভিশনে এসব শিশু খাদ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে আমার ২৭ মাস ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলে চিপস দেখলেই কিনে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলেও সহসাই কিনে দেয়া হয় না। কিন্তু মাঝে মধ্যে কিনে দিতে বাধ্য হলেও এসব চিপসের ভেতরে থাকা খেলনা নিয়ে ভয়ে থাকি। কেননা ভেতরে থাকা খেলনাগুলো এতই ছোট আকৃতির মুখে দিলে যে কোন সময় গলায় আটকে যেতে পারে।

ডা. মুশফিকুর রহমান বলেন, এমনিতেই শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দেয়ার প্রবণতা থাকে শিশুদের। বিশেষ করে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের জন্য এসব খেলনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাচ্চার বয়স উপযোগী খেলনা শিশুদের দেয়া উচিৎ।

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :