স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে আলফাডাঙ্গাবাসীর

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:০১

মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার তরুণ প্রজন্মের জন্য খুলছে স্বপ্নপূরণের আরেক দুয়ার। বিশেষ করে যারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জীবিকার উৎস বিনির্মাণ করতে চান তাদের জন্য দারুণ সুখবর। কামারগ্রামে ৭২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণাধীন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন। চলতি বছরেই সম্পূর্ণ কাজ শেষে এটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ ও কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি সংলগ্ন জমিতে টিটিসি প্রকল্পে চারতলা দুটি ও তিনতলা একটি ভবনসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য শ্রমিকরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে সরেজমিনে জানা গেছে।

এই প্রতিষ্ঠান ঘিরে আলফাডাঙ্গাবাসীর পাশাপাশি ফরিদপুরের অন্য উপজেলায়ও স্বপ্ন ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে পাশের বোয়ালমারী, মধুখালী ও কাশিয়ানী উপজেলার তরুণরাও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হয়ে উঠতে পারবে।

এ ছাড়া টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলে গোটা আলফাডাঙ্গার আর্থিক অগ্রগতিও হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্নও দেখছেন তারা। 

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ফরিদপুর সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি যেসব উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে কামারগ্রামের টিটিসি একটি। এর মাস খানেকের মাথায় শুরু হয় প্রকল্পের কাজ।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন যখন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ছিলেন, তখন বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মীর চাহিদার বিষয়টি খেয়াল করেন। এরপর দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিটিসি স্থাপনের উদ্যোগ নেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে ৪০টি উপজেলায় টিটিসি স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের একটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটও রয়েছে এই প্রকল্পে।

টিটিসির তিনটি ভবনের একটি একাডেমিক, একটি ডরমেটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও ছাত্রী হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হবে। ডরমেটরিতে থাকবেন ছাত্ররা। প্রিন্সিপালদের আবাসিক কোয়ার্টারের উপরে ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফুর রহমান দোলনের প্রচেষ্টা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া ৪০টি টিটিসির মধ্যে একটি অনুমোদিত হয় আলফাডাঙ্গার জন্য। 

এই টিটিসিকে আলফাডাঙ্গার জন্য একটি আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের সদস্যসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম শহীদ। তিনি বলেন, `কামারগ্রামে টিটিসি নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি আশীর্বাদ। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

একই সঙ্গে সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ ও আরিফুর রহমান দোলনকে ধন্যবাদ জানান শহিদুল ইসলাম। বলেন, `খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য এত বড় প্রকল্প পেল আলফাডাঙ্গাবাসী। পাশাপাশি আলফাডাঙ্গার সন্তান আরিফুর রহমান দোলনের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ছিল। তিনি তার যোগাযোগ-সম্পর্কের মাধ্যমে ৪০টি টিটিসির একটি আলফাডাঙ্গায় এনেছেন।’

গোটা আলফাডাঙ্গায় শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী। এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমির প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘তারই উত্তরসূরি আরিফুর রহমান দোলন প্রপিতামহের দেখানো পথে হাঁটছেন। আলফাডাঙ্গায় (কামারগ্রাম) টিটিসি বরাদ্দ আনার পেছনে তার দৌড়ঝাঁপের কথা সবাই জানে। এলাকার রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, কবরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি।’

টিটিসি নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী। ১৯৩৭ সালে মরহুম কাঞ্চন মুন্সী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, কবরস্থান, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/মোআ)