পাপনের কোটে বল, হেরে যাচ্ছেন সাকিব!

দেলোয়ার হোসেন
| আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪০ | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০১
ক্রিকেটারদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বিশেষ মুহূর্তে পাপন-সাকিব (ফাইল ছবি)

ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির দৃশ্যতা মীমাংসা হলেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও বিসিবির পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যে অন্যরকম স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। যে যুদ্ধে সাকিবই হয়তো হারতে চলেছেন। ক্রিকেটারদের আন্দোলনের নাটের গুরু, নেতৃত্বদাতা সাকিবকে কার্যত দেখে নিতে চাইছেন বিসিবি বস। শাস্তি, জরিমানা এমনকি অধিনায়কত্বও হারাতে পারেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার।

ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া যে স্বতস্ফূর্তভাবে মেনে নেননি তা ওই রাতের সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতির বিমর্ষ মুখাবয়ব ও কথাবার্তাই বলে দিচ্ছিল। এবং তিনি যে আস্তে ধীরে, সুকৌশলে এর প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বেন, তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও ছিল।

দুদিন আগে কালের কণ্ঠের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সাকিব ও ক্রিকেটারদের বিসিবি প্রধানের ভাষায় ‘অন্যায্য’ দাবি-দাওয়া নিয়ে যা বলেছেন তাতে খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পান থেকে চুন খসলেই এখন থেকে মূল্য দিতে হবে সেটা ক্রিকেটাররা বুঝে নিয়েছেন, বিশেষ করে যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন।

বল এখন বিসিবি বসের কোটে। সাকিবকে শাস্তি দেওয়ার দারুণ সুযোগ তার নাগালে। কদিন আগে বিসিবির কোড অব কন্ডাক্ট ভেঙে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সঙ্গে কয়েক কোটি টাকার ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপের চুক্তি করেন সাকিব আল হাসান। অর্থলোভী এই চুক্তিই সাকিবের এখন গলার কাঁটা। নতুন বিপদের কারণ। বিসিবির আইনের ধারা মতে, এধরনের চুক্তি তিনি করতেই পারেন না। অথচ সাকিব করে ফেলেছেন বিসিবির কোড অব কন্ডাক্টের তোয়াক্কা না করেই!

বিসিবির সঙ্গে তার যা সম্পর্ক তাতে একবিন্দু ছাড় পাওয়ার কথা নয়। শাস্তি ও মোটা অঙ্কের জরিমানার সম্মুখীন হতে পারেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। সেই শাস্তি কী ধরনের, কত বড়-সেটাই দেখার। বিসিবি কড়া পদক্ষেপের পর সাকিবের প্রতিক্রিয়া কী হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

সাকিব কিছুটা একরোখা স্বভাবের। দেখা যাবে, তিনি হয়তো হুট করে অধিনায়কত্বই ছেড়ে দিয়েছেন। অথবা দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দীর্ঘ একটা ছুটি চেয়ে চলে গেছেন আমেরিকাতে। তখন একটা বড় ঝামেলা শুরু হবে। যেটা সাকিব ও বাংলাদেশ ক্রিকেট, উভয়ের জন্যই ভীষণ অমঙ্গল। সাকিব যদি ওই চুক্তি বাতিল করেন এবং বিসিবির বসের সঙ্গে নমনীয় হয়ে আপস রফা করে ফেলেন, নিজের ভুল স্বীকার করেন, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। সাকিব বুদ্ধিমান হলে তো এটাই করা কথা।

আপাতত ভারত সফরে সাকিবই অধিনায়ক। কিন্তু পরের সিরিজে হয়তো নতুন কাউকে দেখা যাবে বাংলাদেশ টেস্ট ও ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে। সাকিবের অধিনায়কত্ব নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছেন বিসিবি প্রধান। যে দল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে, সেই দলের ২২৪ রানে আফগানিস্তানের কাছে হেরে যাওয়া হতাশার। অধিনায়ক সাকিবের বিরাট ব্যর্থতা দেখছেন পাপন। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে সাকিবের অধিনায়কত্বকে।

ক্রিকেট মানেই বিসিবি। বিসিবি মানেই ক্রিকেট। ‍দুটি অভিন্ন সত্তা। অথচ গত কিছুদিন ধরে সেই অভিন্ন সত্তা যেন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেছিল। বিসিবি ও ক্রিকেটারদের সম্পর্কে কোনো দেয়াল থাকার কথা নয়। অথচ মনে হচ্ছে এখন যেন প্রচ্ছন্ন একটা দেয়াল সেঁটে আছে উভয়ের মাঝে। টেবিলের মীমাংসা হলেও একটা ক্ষত যেন রয়েই গেছে। কিন্তু কার দোষে এই ক্ষত?

দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতেই পারেন খেলোয়াড়রা। তাদের অনেকগুলো দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও করে ফেলেছেন তারা। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের পকেট আরও ভারী করার দাবিতে বরং বেশি গলা ফাটিয়েছেন সাকিবরা। যে কারণে দেশের মানুষের কাছে এটা জনপ্রিয় আন্দোলন হয়ে উঠতে পারেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :