র‌্যাব কর্মকর্তার মানবিকতায় পরীক্ষা দেয়া হলো শাহরিয়ারদের

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৩৮

শাহরিয়ার হোসেন। কুমিল্লার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সিলেট এসেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন তার। আগে কখনও সিলেট না আসায় চেনেন না শহরের রাস্তা-ঘাট। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় তীব্র যানজট। এতে তার ভর্তির স্বপ্নে বাগড়া বাধে। বেশ কয়েকজন সিএনজি চালককে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বললেও তারা রাজি হয়নি।

সিলেট শহরের নিরাপত্তা ও ভর্তি পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে নিয়োজিত ছিল র‌্যাব-৯ এর একটি দল। দায়িত্বে ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম। টহল অবস্থায় তিনি বুঝতে পারেন বৃষ্টি এবং যানজটে অনেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছেন না। তাদের হাতে সময়ও কম। উপায় না দেখে নিজের গাড়িতে এবং টহল গাড়িতে তোলেন বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে। সাইরেন বাজিয়ে রাস্তার জ্যাম ঠেলে তাদের পৌঁছে দেন পরীক্ষা কেন্দ্রে।

পরে এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। তার এই পোস্ট ভাইরাল হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে প্রশংসা করে চলে নানা মন্তব্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে ৩৪তম বিসিএস ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পুলিশে যোগ দেন আনোয়ার হোসেন শামীম। তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি।

আনোয়ার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার ভর্তি পরীক্ষার্থী মেয়ে রিদিকে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সত্তর হাজার আগন্তুকের ভারে ভারাক্রান্ত ছোট্ট বিভাগীয় শহরটির রাস্তাভর্তি জ্যাম। এদিকে ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় বাকি আর মাত্র ১০ মিনিট। যে গাড়িতেই চড়ুন, এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছার চেষ্টা করা অসম্ভবের পেছনে ছোটারই নামান্তর। বাবার মনে হয়ত বিষাদমাখা শঙ্কার কালো মেঘ, এতদূর থেকে এসেও শেষপর্যন্ত মেয়েটির আর ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়া হল না!

"স্যার, তাড়াতাড়ি উঠাই, না হলে আমরা টাইম কাভার করতে পারব না" আমার বডিগার্ড হাসান এই কয়দিনেই সম্ভবত আমার ভাবনার জগতের নাড়িনক্ষত্রের খোঁজ পেয়ে গেছে। আমি কি চিন্তা করছি- মুখ খুলে বলার আগেই সে কিভাবে কিভাবে যেন সব বুঝে যায়। নেমে ইশারা দিতেই বাবা- মেয়ে গাড়ির পেছনে উঠে বসল। ড্রাইভারকে ইমার্জেন্সি সাইরেন বাজিয়ে দিতে বলে প্রায় লাফিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম আমিও। র‌্যাবের সাইরেন আর ড্রাইভার ইউসুফের প্রাণান্তকর চেষ্টায় যখন কেন্দ্রে পৌঁছেছি, গেট বন্ধের ঘণ্টা পড়তে তখন আর বাকি মাত্র আধা মিনিটেরও কম। গাড়ি থেকে নেমেই গেটের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতেই বাবা একবার পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। কে জানে, ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই কিনা! আমি তাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাল্টা ইশারায় দ্রুত গেটের দিকে যাওয়ার তাগাদা দিলাম। হাতে সময় যে খুবই কম!

র‌্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওই দিন র‌্যাবের টহল দলের অফিসার হিসেবে ডিউটিতে ছিলাম। এ সময় নজরে আসে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বৃষ্টি ও ট্রাফিক জ্যামের কারণে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। সিএনজি নিয়েও যদি রওনা দেয় তবুও পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবে না। আর সিভিল কারও পক্ষে সম্ভব হবে না জ্যাম ঠেলে কেন্দ্রে পৌঁছানো। পরে আমার টহল গাড়িতে তুলে সাইরেন বাজিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেই। ওইদিন বেশ কয়েকজনকে এভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছিলাম।’

ঢাকাটাইমস/২৭ অক্টোবর/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :