আমনে রেকর্ড ফলনের আশায় কৃষক

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৫

'চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল/প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে/পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে।'

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় এভাবে চিত্রিত হয় সবুজ মাঠজুড়ে ধানের দৃশ্য। বর্তমানে গ্রামবাংলায় মাঠজুড়ে কৃষকের ফলানো ধানের ছড়াছড়ি। আমন ধানের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক। দিগন্তজোড়া মাঠ সেজেছে যেন হলুদ-সবুজ রঙে। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলে আনতে কৃষক এখন প্রস্ততি নিচ্ছেন। এই ধান বিক্রির পর কৃষানির গায়ে উঠবে নতুন শাড়ি, শিশুরা পাবে ভালোমন্দ খাবার, রঙিন জামা।

অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে তদারকির কারণে চলতি রোপা আমন মৌসুমে ময়মনসিংহের নান্দাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ধান উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। আমন ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অনেককে চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাছাড়া উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড ধান আবাদ ও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার অন্যতম কারণ।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চারদিকে এখন আমনের শীষে ছেয়ে আছে মাঠের পর মাঠ। মাঠ ভরা ফসল দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। নতুন করে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার আমনের ফলন গত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে নান্দাইল শীর্ষ দুয়েকটি উপজেলার একটি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৪ হাজার ২৯৫.৪০ মেট্রিক টন। হাইব্রিড জাতের বিভিন্ন ধানের জন্য ৩০ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৮ মেট্রিক টন, উফশী জাতের ২২ জাতের ২২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৫০৫.৩০ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের ৯৪৫ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮২.১০ মেট্রিক টন ধান। হাইব্রিড জাতের চাষ ৪৫ হেক্টর বেড়ে হয়েছে ৭৫ হেক্টর, উফশী জাতের চাষ হয়েছে ২১ হাজার ২৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৫৫ হেক্টর বেড়ে হয়েছে এক হাজার হেক্টর জমি। এরইমধ্যে অনেক জমির ধান আধাপাকা অবস্থায় দোল খাচ্ছে। আবার কিছু জমির ধান গামর হয়ে ধানের শীষ বের হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। চারা থেকে বেরিয়ে এসেছে শীষ। সবুজ মাঠের দিকে তাকালে জুড়িয়ে যায় দুচোখ। স্থানীয় জাতের ধান পাকতে শুরু করেছে।

বীরকামটখালী গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি আমনের বাম্পার ফলনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এখন কার্তিকের শুরু থেকে ফসলের মাঠে যে কুয়াশা পড়বে তাতে ধান হৃষ্টপুষ্ট হবে। আর সপ্তাহ দুয়েক পর এই এলাকায় ধান কাটা শুরু হবে। কান্দা জমিতে যা রোপন করা হয়েছে, সেগুলো কাটা শুরু হয়েছে। এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এখন ভালো দাম পেলেই খুশি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে জানান, এ বছর ব্রি-ধান ৩২, ৩৪, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৫৭, ৬২, ৭১, বি আর ২২ এবং স্থানীয় জাতের কালিজিরা, গোলাপি এবং বিরই জাতের ধান বেশি আবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলায় ১৯টি প্রদর্শনী প্লটে ও রোপা আমনের চাষ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে তদারকি, কৃষকদের পরামর্শ এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়েছে। রোপা আমন আবাদের সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :