দীপক আগারওয়ালের কী হবে?

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৪৪

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা বিনিময় হয়েছিল ভারতীয় এক জুয়াড়ির সঙ্গে। কয়েক দফায়। লোকটির উদ্দেশ্য যে সৎ নয়, বুঝতে অবশ্য সময় লেগেছিল সাকিব আল হাসানের। যখন ‍বুঝতে পারলেন তখন সতর্ক হলেন। কিন্তু বিষয়টি ক্রিকেটের বিশ্ব সংস্থা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে বিষয়টি জানাননি। এই তাঁর অপরাধ। আর কিছু নয়। তাতেই দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এসেছে সাকিবের ওপর।

এই খবর ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে শেলের মতো বিঁধেছে। আইসিসির এই সিদ্ধান্ত অগত্যা মানতে হলেও অসন্তোষ সবার মনে। দল-মতনির্বিশেষে ক্রিকেটের ব্যাপারে আমাদের ঐক্য বিস্ময়কর। এই খেলা নিয়ে সব মানুষের আবেগ-অনুভূতি এক সুতোয় গাঁথা। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর তাই আলোচনার খোরাক হয়েছে পথেঘাটে। গণপরিবহনেও। গণমাধ্যমগুলো  তো সরব আগে থেকেই।

নিষেধাজ্ঞার খবরে সাকিবের মনের অবস্থা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নক্ষত্রের গায়ে মেঘের ছায়া মেনে নেওয়ার মতো নয়।

সাকিবের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল সেই জুয়াড়ির সেই খবরও মিলছে আইসিসি সূত্রে। পুরো অভিযোগের বিষয়টি খোলাসা করেছেন তারা। প্রশ্ন, যে ভারতীয় জুয়াড়ির সঙ্গে বার্তা বিনিময়ের কারণে এত বড় ক্ষতি সইতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে, সেই দীপক আগারওয়ালের কী হবে? এই জুয়াড়ির ঠিকুজি-কুলজি আগে থেকেই জানা আইসিসির। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের রায়গড় শহর থেকে আরও দুই জুয়াড়িসহ আটক করা হয়েছিল তাকে। ওই সময়ে তাদের কাছ থেকে জুয়ার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিও উদ্ধার করা হয়। পরে আবার ছাড়া পায় দীপক।

জেল থেকে বেরিয়ে আগারওয়াল ফের মাতেন জুয়ায়। তারই শিকার সাকিব আল হাসান। প্রশ্ন হলো, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এ ব্যাপারে আইসিসির বক্তব্য কোনো গণমাধ্যমেই চোখে পড়ছে না।

কোনো অন্যায় প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে, কোনো ধরনের আর্থিক বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে কেবল বার্তা বিনিময়ের কারণে যদি সাকিবকে দীর্ঘ সময় খেলা থেকে দূরে থাকতে হয়, তাহলে জুয়াড়ির সাজা কী হবে? তিনি কি রেহাই পেয়ে যাবেন? সাকিবের সাজা ঘোষণা হওয়ার আগে দীপক আগারওয়ালের বিরুদ্ধে আইসিসি কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার ছিল।

এখন যদি আইসিসি বলে যে, দীপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার বা ক্ষমতা তাদের নেই, এটা কি যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা হবে? যিনি খেলোয়াড়কে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করলেন তার বিরুদ্ধে কি এই অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কি এ ব্যাপারে আইসিসির কাছে কোনো আবেদন বা প্রশ্ন রেখেছে? তারা কি একটিবার বলেছে দীপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে? জুয়াড়িদের ফাঁদে পড়ে এর আগে আমাদের অনেক তারকা ক্রিকেটার ঝরে গেছে। মোহাম্মদ আশরাফুলকে আমরা এখনো মিস করি। তাঁর মতো একজন ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করার খেসারত দেশের ক্রিকেটকে দিতে হয়েছে।

শুধু খেলোয়াড় নয়, জুয়াড়িদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ক্রিকেট বোর্ডকে এ ব্যাপারে আরও সোচ্চার হতে হবে। সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞা দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করেন ক্রীড়ামোদীরা। বিসিবি কি তা মনে করে না?

লেখক: সাংবাদিক।