আসুন, সাকিবের পাশে দাঁড়াই

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:২৯ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৭

মামুন জোয়ারদার
মামুন জোয়ারদার

আমি ফুটবলের মানুষ। ফুটবল নিয়েই আমার আগ্রহ বেশি থাকার কথা। এটা ঠিক, প্রবাস জীবনের অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমি দেশের ফুটবলের নিয়মিত ফলোয়ার। ফুটবলের অনগ্রসরতা আমাকে বারবার আহত করে। একসময়ের রমরমা ফুটবল ঝিমিয়ে পড়েছে। অথচ তখনকার ঝিমিয়ে থাকা ক্রিকেট উঠে এসেছে তরতর করে, দারুণভাবে। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে দেশের ক্রিকেটের উত্থানে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। ফুটবলার হয়েও আমি আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে গেছি।

মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, সাকিব; আমার কাছে এ নামগুলো অতি প্রিয়, প্রাণ জুড়ানো। বরাবরই বাংলাদেশ দলের ও এদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আমি আলোড়িত হই। উদ্বেলিত হই। সেই প্রিয় সাকিব ও প্রিয় বাংলাদেশ দলের কঠিন সময় আমাকে ভীষণ ব্যথিত করেছে। সাকিবের এক বছরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা আমি মাথা থেকে সরাতেই পারছি না। আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ব্যথায় আমার বুকটা ভারী হয়ে আছে।

শুধু সাকিবের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড্ড দুঃসময় এখন। ছোট ছোট ভুল অনেক সময় বড় হয়ে ওঠে।  সাকিব কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েননি। তিনি ফেঁসেছেন স্রেফ ভুলের কারণে অথবা অবহেলার কারণে অথা দায়িত্বহীনতার সামান্য ঘাটতিজনিত কারণে। সাকিবের প্রতি আমার পুরো বিশ্বাস রয়েছে, তিনি দেশের জন্য খারাপ কিছু করে বসার মানুষ নন।

আমাদের সময়েও ফুটবলে জুয়াড়ি ছিল। আমরা প্রস্তাবও পেয়েছি। কিন্তু দলের সঙ্গে কখনও বেঈমানি করিনি। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। কতো নিয়ম কানুন হয়েছে নতুন নতুন। এই নিয়মগুলো সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকা জরুরি খেলোয়াড়দের। আরেকটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া। সাকিব যেটা করেননি। আমি বিশ্বাস করি, সাকিব ব্যাপারটাকে গুরুত্বই দেননি। জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে তা গ্রহণ না করে সেটা ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনে নিজের ভেতরে রেখে দিয়েছেন।

এই জায়গাটাতেই ভুল করে ফেলেছেন অথবা কিছুটা গাফিলতি করেছেন। বিষয়টা হয়তো খুব বেশি ভেবে দেখেননি সাকিব। হয়তো ভেবেছেন, প্রস্তাব পেয়েছে, প্রস্তাব রাখেননি। ব্যস, এখানেই শেষ। আর এই সরল ভাবনাই হয়তো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমি যেটা বুঝি সেটা হলো, জুয়ায় জড়ান বড় দলের খেলোয়াড়রা। তারা খারাপ খেলে ইচ্ছে করে হেরে যান। বাংলাদেশ সেই ধরনের বড় দল হয়ে ওঠেনি যে তার খেলোয়াড়রা হারার জন্য টাকা খেয়ে বসে থাকবে। বাংলাদেশের মতো দলের কাছে একটা জয় অনেক কাঙিক্ষত। তাই হেরে যাওয়ার জন্য খারাপ খেলতে পারেন না তারা। আমার পুরো বিশ্বাস সাকিব কেন, জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড়ই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার মতো অবস্থায় যাননি। হ্যাঁ, আশরাফুল করেছিলেন। কিন্তু সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটে।

সাকিবের বিষয়টা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে।  অনেকে বিসিবিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করছেন। অনেকে প্রতিবেশি দেশের চক্রান্ত দেখছেন। দেশসেরা তারকার এমন পরিস্থিতি কেউ আসলে মেনে নিতে পারছেন না। তাই একেকজন একেক কথা বলছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই, যেটা হয়েছে সেটা সাকিবের স্রেফ ভুলের কারণে অথবা সিরিয়াসনেসের অভাবের কারণে হয়েছে। নৈতিকতার দিক দিয়ে তিনি পরিচ্ছন্ন আছেন এবং থাকবেনও।

যেটা হয়েছে সেটা তো হয়েছেই। এখন করণীয় ঠিক করতে হবে। শাস্তি কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেটা করতে হবে। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাকিব। পাপন সাহেব সাকিবের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

সাকিবের ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। তিনি ভীষণ ক্রীড়াপ্রেমী। তিনিও জানিয়েছেন, সাকিবের বিপদে পাশে থাকবে বিসিবি। প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সাকিবকে সবচেয়ে বড় সাহসটা তো  প্রধানমন্ত্রীই যুগিয়েছেন। আসুন, আমরা সবাই সাকিবের পাশে দাঁড়াই। অহেতুক সমালোচনা না করি তার এই দুঃসময়ে।

লেখক: সাবেক ফুটবল তারকা