প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা: কাঙ্ক্ষিত মানোন্নয়নে করণীয়

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:১৩ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩৭

ঝোটন চন্দ

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুকরণ বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি অন্যতম মাইলফলক। কোমলমতি শিশুদের ক্লাসরুম ও বিদ্যালয়ের ভীতি কাটিয়ে উঠে খেলাচ্ছলে বর্ণমালার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া ও জ্ঞানার্জনের পথে হাঁটতে শেখাতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষসমূহ। নানান রঙ-বেরঙের ছবি, চিত্রকলা, কার্টুন ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অজান্তেই পরিচিত হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালাভের প্রথম সিঁড়িগুলোর সাথে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি তারা পরিচিত হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও নতুন খেলার সাথীদের সাথে। পূর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিদ্যালয়ে যাওয়ার যে ভীতি ও জড়তা ছিলো- তা এখন অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। যার সার্বিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার, ঝড়েপড়া উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়া ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অভাবনীয় সাফল্যের পরেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি।  প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের অভাবে তারা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে ক্ষুদে শিশুদের পূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না। উন্নত দেশসমূহে ৪/৫ বছর বয়সী শিশুদের পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যালয়ে খেলার সময় শিশুদের বিচ্ছিন্নভাবে ছেড়ে না  দিয়ে শিক্ষকদের  খেয়াল রাখতে হয় কোন বিদ্যার্থী অন্যমনস্ক কিনা বা সহপাঠীদের নিকট থেকে দূরে অবস্থান করছে কিনা। এমনটি হলে শিক্ষকের দায়িত্ব হবে ওই শিশুটিকে বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে সকলের সাথে খেলতে সহযোগিতা করা। অন্যথায় পরবর্তী সময়ের জন্য ওই শিক্ষার্থী অন্তর্মুখী স্বভাবের অধিকারী হয়ে অন্যদের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, জন্মের পর ৮/৯ বছর বয়সেই একটি শিশুর মস্তিষ্ক উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিকশিত হয়। তাদের আচরণ, মনস্তাত্ত্বিক গঠন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান, রুচিবোধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রকাশ লাভ করে।  তাই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদের এসকল বিষয়ে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ২য় শিফটে ৪র্থ/৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঠলাভ করে। এতে করে সাজানো ক্লাসরুমের স্বতন্ত্রতা রক্ষা এবং শিক্ষা উপকরণসমূহের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই পৃথক সুবিধাসংবলিত পূর্ণকালীন শ্রেণিকক্ষ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, বর্ণ-পরিচয়সহ মৌলিক বিষয়সমূহের পরিচিতি লাভের জন্য অত্যাধুনিক উপকরণের অভাবে শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে শিক্ষার্জন করতে পারে না। আমরা জানি যে, প্রতিটি শিশুর মাঝে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। বিভিন্ন শিশুর মাঝে ছোটবেলা থেকেই খেলা, চিত্রাঙ্কন,  সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছে না। এক্ষেত্রে ছবি, ভিডিওসহ আধুনিক শিক্ষা উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইতোমধ্যে অনেক পথ পাড়ি দিলেও উল্লিখিত বিষয়সহ আরো কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে আছি। তবে আশার কথা হলো, বিনা বেতনে অধ্যয়ন, মিড-মে মিল চালুকরণসহ নানবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য আমরা এখন প্রস্তুত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে ভূমিকা রাখবে আজ প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া শিশুরা। তাই প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যমী ও প্রত্যয়ী ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।