পদত্যাগ করছেন আরিফসহ সিলেট বিএনপির চার নেতা!
সিলেট যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিএনপির চার নেতা দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল রবিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র দাখিল করার কথা জানিয়েছেন তারা।
বিএনপিসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনে ত্যাগী ও সক্রিয়দের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ করে এই চার নেতা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চার নেতা হলেন- বিনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পদত্যাগের সিদ্ধান্ত একটি প্রতিবাদ। প্রতিবাদটা হচ্ছে তৃণমূলকে না জানিয়ে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত।
আরিফ বলেন, বিএনপি আমার প্রাণের সংগঠন। এটাই শুরু এটাই শেষ। আমরা প্রতিবাদী হয়ে পদটা শুধু ত্যাগ করব, দল নয়।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী পদত্যাগের বিষয়ে বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ইমানি দায়িত্ব। আমরা শুধু আওয়ামী লীগের অন্যায়ের প্রতিবাদ করব অথচ নিজেদের দলের ভেতরে যে অন্যায় ঘটে তার প্রতিবাদ করবো না, তাতে তো ইমান থাকে না। তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতেই আমরা বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।
শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, পদত্যাগীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। দুই-একদিনের মধ্যেই আমরা ঢাকা আসবো। ঢাকায় এসে আমাদের পদত্যাগপত্র যথাস্থানে পৌঁছে দেব।
পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ডা. শাহরিয়ার চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, শামসুজ্জামান জামান ছাত্রদলের প্রোডাক্ট। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করি। আমরা বিএনপিতে হাইব্রিড না। আজকে আমরা দেখি, একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের দলে হাইব্রিডদের কর্মকাণ্ডে ব্রিবত হচ্ছে। তারা দলকে বাঁচাতে সেসব হাইব্রিডদের চিহ্নিত করছে। দল থেকে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। অথচ দুঃখজনক বিষয়, বিএনপিতে হাইব্রিডদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে।’
‘আমি সিলেট বিএনপির ফাউন্ডারদের মধ্যে একজন। অথচ যুবদলে যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে, তাদের আমি, ডা. শাহরিয়ার, মেয়র আরিফুল, শামসুজ্জামানসহ কেউ চিনি না। আমরা মাঠে থাকি। আমাদের কারণে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকে। অনেকের বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা। তারা ঘরে থাকতে পারে না। সাত দিনের মধ্যে বেশিরভাগ দিনই তাদের আদালতে হাজিরায় কাটে। এসব আমাদেরই কারণে। অথচ দলের কমিটি গঠনে আমরা তাদের স্থান দিতে পারছি না। তারা কান্নাকাটি করছে। আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না। তাই বিবেকের তাড়নায় আমরা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করছি।’
মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘শনিবার রাতে আমরা বৈঠক করবো। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর রবিবারই আমরা ঢাকায় যাব। সেখানে মহাসচিবের কাছে আমরা পদত্যাগপত্র জমা দেব। আমরা গোপনে নয়, প্রকাশ্যে এ কাজ করবো।’ তিনি বলেন, শিগগিরিই আমরা প্রেস কনফারেন্স করে বিস্তারিত গণমাধ্যমকে জানাবো যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি মহল অন্ধকারে রেখে, ভুল বুঝিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে বিএনপির ক্ষতি করছে।
বিএনপি নেতা সামসুজ্জামান বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে প্রায় দেড় হাজার সমর্থক নিয়ে সিলেটে মিছিল করেছে যুবদল। নতুন কমিটিতে সেই সব কর্মসূচি উদযাপনকারী কেউ নেই। এজন্য তারা রাতেই বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিল। আমরা বারণ করে নিজেই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
১৯ বছর পর সিলেটে যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় গত শুক্রবার। জেলার আহ্বায়ক মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সিদ্দিকুর রহমান, মহাগরের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান। এই দুজন যুবদলের কোনো কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন না বলে রাতেই যুবদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/এমএ/জেবি)