দেশে ২২ বছরে ৩৫ সাংবাদিক হত্যা

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ২২ বছরে বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র আটটি হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও পাঁচটির রায় ভুক্তভোগীর পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে এক প্রবন্ধে উঠে এসছে।

আজ শনিবার ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা’ আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক গোল টেবিল বৈঠকে রিপোটার্স উইদাউট বর্ডাস (আরএসএফ) এর বাংলাদেশ শাখা এ তথ্য জানায়।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বরকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধ বিচারহীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে ইউনেস্কো।

রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আর্টিকেল নাইনটিনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্তাপনা করেন রিপোটার্স উইদাউট বর্ডাস’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি সেলিম সামাদ। আর্টিকেল নাইনটিনের সংবদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে।

প্রবন্ধে হত্যাকাণ্ড ও বিচারের চিত্র তুলে ধরে সেলিম সামাদ বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো বিচার সম্পন্ন হওয়া আটটি মামলার মধ্যে ৫টি মামলার বিচারের রায়কে প্রত্যাখান করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

মূল প্রবন্ধে সুপারিশ করা হয়, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করা, সাংবাদিকদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে আলাদা আইনজীবী নিয়োগ করা ও ডিজিটাল নিরাত্তা আইন ২০১৮ সহ হয়রানিমূলক আইন সমূহ প্রত্যাহার করা।

নিহত সাংবাদিক মেহেরুন্নেছা রুনির ভাই ও রুনি হত্যা মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, রুনি হত্যার আট বছর হয়েছে। অথচ আদালতে ৬৮ বার সময় চেয়ে ও তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা হতাশাজনক। সাগর ও রুনির সন্তান মেঘ আজ তের বছর বয়সি। এখন পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্র জানাতে পারেনি কে তার পিতা-মাতার ঘাতক।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া পুর্নগঠন প্রয়োজন। বিচারহীনতা রোধ করার  জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে যুক্ত করতে হবে।

আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চাকারীদের ওপর হামলা, মামলাসহ নির্যাতন বাড়ছে। দেশে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। আর্টিকেল নাইটিন সকলের জন্য, নারী-পুরুষ, তৃতীয়লিঙ্গ, সমকামী, ছেলে-মেয়ের জন্য, এমন একটি সমাজ প্রত্যাশা করে, যেখানে সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে।

বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর শামীম রেজা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি, নাসিমুন আরা হক মিনু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, একাত্তর জার্নালের উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খায়রজ্জামান কামাল, কালের কন্ঠের মারিয়া সালাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক সেলিনা শিউলি, নিহত সাংবাদিক মেহেরুন্নেছা রুনির ভাই ও রুনি হত্যা মামলার বাদী নওশের আলম রোমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, প্রগতিশীল আইনজীবী ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা জন্য যারা কাজ করেন তাদের সম্নিলিত একটি প্লাটফর্ম প্রয়োজন, যেখান থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপলোপের জন্য একসঙ্গে কাজ করা হবে।

বক্তব্যে ‘কর্পোরেট হাউজের প্রভাবের কারণে মুক্ত সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করছে না’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

বৈঠকে ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর মালিতে দু'জন ফরাসি সাংবাদিক হত্যার স্মরণে এই তারিখটিকে ইমপিউনিটি ডে হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ।

 (ঢাকাটাইমস/ ২নভেম্বর/জেআর/ইএস)