দ্রুত সম্মেলন চাইছেন পদবঞ্চিতরা

ছাত্রলীগে বিতর্কিতদের তালিকা বড় হয়েছে

মনিরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৫

দুর্নীতিসহ যেসব অভিযোগে পদ হারান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ না দেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু এখনো সেই অভিযোগ থেকে বের হতে পারেনি ছাত্রলীগ। নতুন নেতারা বলেছেন, সেই তালিকা এখন আরও বড় হয়েছে। সবার বিষয়ে তদন্ত চলছে।

দায়িত্ব পাওয়ার দুই মাসেও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুরোনো তালিকার বিতর্কিতদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে পদবঞ্চিতদের মধ্যে। তারা চাইছেন দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে বিতর্কমুক্ত কমিটি নির্বাচিত হোক।

তবে শোভন-রাব্বানী প্রণীত বিতর্কিতদের তালিকা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে দায় নিতে চান না ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয়। তার দাবি, তারা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রলীগ বর্তমানে বেশ ভালোভাবে চলছে। বিতর্কিতদের বিষয়ে চলমান তদন্ত শেষ হলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদবঞ্চিতদের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৫ মে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রাব্বানী কমিটির ১৭ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান। এ সময় তিনি ১৫ জনের নাম ঘোষণা করেন। তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় অভিযোগ খ-ানোর জন্য।

এরপর ২৯ মে ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাদকাসক্ত, বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমিটির ১৯ জনকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। তবে তখন পদগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়েন শোভন-রাব্বানী। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে শীর্ষ নেতৃত্বে আসীন হন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। তারাও এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেননি ওই ১৯ জনের নাম।

তবে ১৫ মে শোভন-রব্বানী যে ১৫ জনের নাম প্রকাশ করেছিলেন তারা এখনো বহাল আছেন কমিটিতে।

কবে বিতর্কিতদের নাম প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা বলতে পারছেন না। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘১৯ জনের বাইরে আমাদের কাছে আরও অনেকের নামে অভিযোগ আসছে। আমরা সব অভিযোগ একত্র করে তদন্ত করছি। তদন্ত রিপোর্টে যাদের নাম আসবে সবাইকে একসঙ্গে বাদ দেওয়া হবে। এখনই কোনো সময়ের কথা বলা যাচ্ছে না।’

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পাওয়ার পর আশাবাদী হয়েছিলেন যেসব পদবঞ্চিত নেতা, তারা এখন কিছুটা হতাশ বলে জানান ঢাকা টাইমসকে। একজন নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার পর জয় ও লেখক আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন অতিদ্রুত বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ও তাদের অনুরোধে আমরা বিতর্কিত কমিটিকে বাদ দিয়ে আলাদাভাবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছি। কিন্তু এত দিনেও দৃশ্যমান কিছু না হওয়ায় এখন আমাদের মনে হচ্ছে তারা আমাদের হতাশ করেছেন।’

বিতর্কিতদের এখনো কমিটিতে থাকাকে দুঃখজনক বলছেন ছাত্রলীগের গত কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন। তিনি বলেন, ‘শোভন ও রাব্বানী যে অপকর্মের দায় নিয়ে দল থেকে বিদায় নিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল তারা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। এখন যারা ভারপ্রাপ্ত আছেন তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল তারা শোভন-রাব্বানীর পথে হাঁটবেন না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তারাও বিতর্কিতদের সঙ্গে উঠাবসা করছেন এবং তাদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন ’

নকিবুল ইসলাম সুমন বিতর্কিতদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জয় ও লেখক উদাসীন দেখছেন। বলেন, ‘তারা সময় চেয়েছিল। আমরা তাদের সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা গড়িমসি করছেন। এখন আমরা বুঝতে পারছি সমস্যা সমাধানে কোনো ভাবনা তাদের নেই। এভাবে একটা সংগঠন চলতে পারে না। আমরা চাই অতিদ্রুত সম্মেলন হোক।’

যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে চলমান শুদ্ধি অভিযানের কথা উল্লেখ করে সুমন এ থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার আহ্বান জানান।

ছাত্রলীগে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে এই নেতা বলেন, কমিটির কেউ কারও কথা মানছেন না।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে নেতৃত্বে এসেছেন এবং কাজেকর্মে তাদের বিশেষ হওয়ার কথা ছিল বলে মনে করেন গত কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগে মূল অসন্তোষ বিতর্কিতদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দ্রুতই নিতে পারতেন তারা। সেই সুযোগ তাদের ছিল। সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান চলছে। আমরাও তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু এখনো কিছু হয়নি।’

শীর্ষ নেতৃত্বে আসার আগে লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিতর্কিতদের নিয়ে একাধিকবার তার কথা হয়েছে জানিয়ে রানা হামিদ বলেন, ‘তখন তিনি আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন। দায়িত্বে আসার পর কেন তিনি এখন সেটা করছেন না বুঝতে পারছি না। আমার আশঙ্কা, তারা আর এটির সমাধান করতে পারবেন না। কারণ দিন দিন তাদের প্রতি কমিটির অন্য সদস্যদের আস্থা কমছে।’

ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরাসরি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনাই উত্তম বলে মনে করেন তিনি।

‘বিতর্কিত’দের যে তালিকা শোভন-রাব্বানী করে গেছেন সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তের দায় এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিতর্কিতদের বিষয়ে তদন্ত করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি, যেন আসল তথ্যটি আমরা পাই। তাই একটু সময় লাগছে।’

তদন্ত করেই ১৯ জন বিতর্কিতের নাম তালিকা করা হয়েছে- এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলে জয় বলেন, ‘তখন আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলাম না, এখন আমরা সেই দায়িত্ব পালন করছি। আগে যা হয়েছে সেসব না দেখে আমরা চাচ্ছি নতুন করে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ এখন আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব তার দায় আমাদেরই নিতে হবে।’

পদবঞ্চিতদের সম্মেলন চাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘তারা তাদের মত দিয়েছে। আমরা মনে করি ছাত্রলীগ ভালোভাবে চলছে। তাদের বুঝতে হবে আমরা বিশেষ পরিস্থিতিতে এসেছি। তারা যদি আমাদের সময় না দিয়ে আগেই একটা মত প্রকাশ করে দেয়, তাহলে তাতে নেতিবাচক কিছু থাকতে পারে বলে সন্দেহ সৃষ্টি হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৩নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আ.লীগের ‘মানা’

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি নেতা হাবিব কারাগারে

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভাঁওতাবাজি': আমীর খসরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :