রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৫৭ | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৬

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পাওয়া গেছে। শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত কমিটির সদস্যরা রবিবার বিকালে তদন্তকালে এ টর্চার সেলের সন্ধান পান।

এসময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন।

রাজশাহী পলিটেকনিকের পুকুরের পশ্চিম পাশের ভবনের ১১১৯ নম্বর কক্ষে এ টর্চার সেল থেকে লোহার রড, পাইপ ও লাঠি উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয়।

এ সময় তদন্ত কমিটির কাছে কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র জানান, ওই টর্চার সেলটি ছাত্রলীগের। ওই কক্ষের সামনে ছাত্রলীগের টেন্ট। ছাত্রলীগের নেতাদের কথা না শুনলে সেখানে নিয়ে শিক্ষার্থীদের টর্চার করা হয়। এছাড়াও এসময় ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলেন।

অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) সাক্ষরিত এক পত্রে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আরেক পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এসএম ফেরদৌস আলমকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম এবং রাজশাহী মহিলা পলিকেনিটক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক এসএম ফেরদৌস আলম বলেন, রবিবার সকালে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিকালে আমরা দুজন ঢাকা থেকে বিমানে রাজশাহী এসেছি। আর কমিটির অপর সদস্য রাজশাহীতে ছিলেন। রাজশাহী পৌঁছেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

টর্চার সেল নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস আলম বলেন, সব বিষয় আমরা তদন্ত করছি। অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছি। পরিপূর্ণ তদন্তের পরেই কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, টর্চার সেলের ওই কক্ষটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে এনে রড ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হতো। এখানে চলে ফ্রি স্টাইলে মারধর। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোনো বিষয়ে কথা বললে বা তাদের কোনো অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। এছাড়া যত অপকর্ম আছে তার পরিকল্পনা এখানেই করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এমনকি শিক্ষকের সামনেই ক্লাস থেকে সাধারণ ছাত্রদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন করা হতো।

তদন্ত কমিটির সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নূর উল্লাহ জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে একটি নির্দিষ্ট চত্বরে বসে এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মারধর করে। এর আগে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আক্রমণ চালায়। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে বাধা দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের চেয়ার তুলে মারতে আসে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অবৈধ দাবি নিয়ে সবসময় ঝামেলা করে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন। তিনি তদন্ত কমিটির সামনে বলেন, পরীক্ষায় শূন্য পেলেও পাস করিয়ে দিতে হবে, একদিনও ক্লাসে আসেনি এমন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে হবে, এমন সব অযৌক্তিক দাবি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের ছেলেরা কেউই ক্লাস করে না। প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাকও পরে না।

অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওই কক্ষটি জোর করে নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যবহার করে। সেখানে বসে তারা বিভিন্ন সময় আড্ডা বা মিটিং করে। তবে শুনেছি তারা ওই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করত। তবে এ নিয়ে কেউ কোনদিন তার কাছে অভিযোগ করেনি। ছাত্রলীগের ছেলেদের বিরুদ্ধে শিক্ষক বা ছাত্র সবাই অভিযোগ দিতে ভয় পায় বলে এসময় জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৩নভেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :