গার্ডিয়ান লাইফ: সবার জন্য বিমা

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৮

আসিফ তরফদার

‘সবার জন্য বিমা’ এই নীতিতে গার্ডিয়ান লাইফের ‘গার্ডিয়ান ব্র্যাক বিমা’ বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুজনিত/পঙ্গুত্বের কারণে আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলার জন্যেও কাজ করছে।

‘বিমা গ্রহণের কারণে আপনি কখনো দেউলিয়া হবেন না, তবে না গ্রহণ করার কারণে আপনার প্রিয়জনের মধ্যে কেউ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে’, জ্যাক মা। নিঃসন্দেহে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ সবচেয়ে কার্যকরি সমাধান। বহু বছর ধরে এটি বাংলাদেশের লাখো গ্রামীণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের সাথী। তবে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু নীতিমালা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন যাতে দারিদ্র্যতার ছোবল থেকে গরিব মানুষের আরও অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আর ঠিক সেখানেই ক্ষুদ্রবিমা এবং ক্ষুদ্র ঋণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা জরুরি। কারণ, পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুতে এক বিশালসংখ্যক মানুষ প্রতিনিয়তই বিপদগ্রস্ত হচ্ছে (ঋণগ্রহীতা/স্ত্রী/স্বামী)। নিজেকে এবং পরিবারকে এ ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য, গ্রাহকেরা ক্ষুদ্র বিমার প্রতি ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে।

ক্ষুদ্র বিমা অসংখ্য মানুষকে বিমা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সাজানো হয়েছে যেন পূর্বে যারা বিমা গ্রহণ করতে অক্ষম ছিলেন তারাও এখন যুক্ত হতে পারেন। এটি দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের পরিবারকে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুজনিত/পঙ্গুত্বের কারণে আর্থিক ঝুঁকির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সহায়তা করবে। বিগত দশকে বিমা ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এর অনুপ্রবেশের হার মাত্র ৩-৪ শতাংশ, যার ফলে এই ক্ষেত্রটির সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পরেছে। এই অবস্থায়, বিমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, আধুনিক বিমা কোম্পানিসমূহ এবং অন্য অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ক্ষেত্রটির উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়া খুবই জরুরি।

ব্র্যাক, স্কয়ার গ্রুপ এবং এপেক্স গ্রুপের দূরদর্শী উদ্যোক্তারা সম্মিলিতভাবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্ষেত্রটি সংস্কারে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং এ লক্ষ্যেই গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকেই গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স সব সময় চিরাচরিত সব প্রথা চ্যালেঞ্জ করে আসছে; সৃজনশীলতা ও  নতুন ব্যবসায়িক পদ্ধতি অনুধাবন করার জন্য গার্ডিয়ান লাইফ এক বহুল আলোচিত বিমা কোম্পানি। বিমাশিল্পকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স  সুপরিচিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রগতিশীল জীবন বিমা কোম্পানি, ‘সেরা গ্রুপ বিমা’ কারক, ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি’ এবং ‘সবার জন্য বিমা’ প্রদানে সহায়ক, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বহুল আলোচিত ক্ষুদ্র বিমা প্রকল্প- গার্ডিয়ান ব্র্যাক বিমা (জিবিবি) এই ক্ষেত্রটিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই উদ্যোগটি অসংখ্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে যার মধ্যে এশিয়ান ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স অন্যতম। তারা উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাতে ২০১৭ সালে মর্যাদাপূর্ণ ইন্স্যুরেন্স এশিয়া অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স সব সময়ই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাত্রা উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং দুস্থ ও অবহেলিত মানুষের জীবনে বিমার সুফল ছড়িয়ে দিচ্ছে। যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্ষুদ্র বিমার উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন মডেল উদ্ভাবন করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে যা সমাজে টেকশই উন্নয়ন সাধিত করবে। বহু প্রচেষ্টার পর, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স তাদের বহুল আলোচিত জিবিবি প্রকল্প শুরু করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে জিবিবি প্রকল্পের আওতায় এক কোটি মানুষের বিমা সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ব্র্যাক হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও বিখ্যাত এনজিও, যার মূল কার্যক্রম হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প এবং ঋণগ্রহীতাদের ৮৩ শতাংশই হলো নারী। ব্র্যাকের সঙ্গে বেশ কিছু পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পর, জিবিবি প্রকল্প ২০১৭ সালে সারা দেশব্যাপী চালু করা হয়। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পুরো প্রকল্পটি ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদ্বারত্বে সম্প্রসারিত করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটির আওতায় সঙ্গে সঙ্গে ঋণগ্রহীতার তার স্বামী/স্ত্রীও সেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধু ঋণগ্রহীতাই নয় তার স্বামী/স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রেও অপরজনকে পরিবারের ঋণ পরিশোধের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়।

প্রবর্তন এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্প্রসারণ

পরিবর্তনের ধারা, সম্ভাবনা এবং ব্র্যাকের সুবিশাল কাঠামোর দ্বারা গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স  লিমিটেড ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড জনগণের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করেছে। ব্র‍্যাকের সঙ্গে অংশীদারত্ব, স্কিমটিকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রসার এনে দেয়। ফলে, ২০১৬ সালে মাত্র ৬৫০টি ব্রাঞ্চ নিয়ে শুরু করা পাইলটিং ফেজ শেষে, ২০১৭ সালে যখন প্রোজেক্টটি পরিপূর্ণভাবে রোল আউট শুরু হয়, তখন তা মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যেই সব ব্র‍্যাক নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে (যা বর্তমানে ২৫৩০টি ব্রাঞ্চে উপনীত হয়েছে)। কার্যাবলি পরিচালনা এবং দ্রুত দাবি নিষ্পত্তির জন্য গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড দুই ধাপে কাজ করছে যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মান এবং কার্যকারিতা দুটো বিষয়ই নিশ্চিত করতে পারছে। তাছাড়া গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড কার্যকারিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্র্যাক গার্ডিয়ান বিমা ওয়েব পোর্টালও চালু করেছে।

আঞ্চলিক বাধা দূরীকরণ

ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারত্ব গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডকে সারা দেশে বিস্তৃত হতে সহায়তা করেছে, যার ফলে ৫৭ লাখের অধিক গ্রহীতাদের ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হয়েছে, যেখানে এক কোটির অধিক মানুষ বিমা সুবিধা পেয়েছে। জিবিবি প্রকল্পের অধীনে, প্রথমবারের মতো দেশে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কোনো এক প্রতিষ্ঠানের (ব্র্যাক) অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছে (২৫৩০ শাখা)।

সবপক্ষের জয়

গার্ডিয়ান ব্র্যাক বিমা প্রকল্পটি সব অংশীদারদের সুবিধা প্রদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রথমত, এটি গ্রাহকের মৃত্যুর সংবেদনশীল সময়ে ব্র্যাকের অনাদায়ী ঋণ আদায়ের কার্যক্রম থেকে ব্র্যাককে মুক্ত ও নিশ্চিন্ত করে দেয়। দ্বিতীয়ত, ঋণগ্রহীতার পরিবারের সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারকে ঋণের জালে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। স্বীকৃত বিমা বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রিমিয়ামের মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যার ফলে সঠিক ঝুঁকি নিরূপণ এবং স্বল্প খরচে অর্থনৈতিক মানানসই প্রকল্প গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। অবশেষে, গার্ডিয়ান লাইফ একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর বিমা করার সুবিধা পায় ফলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাহক, ব্র্যাক ও গার্ডিয়ান লাইফ সবাই এর সুফল ভোগ করছে।

দাবি প্রক্রিয়ার এক নতুন মাধ্যম

প্রারম্ভিক সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য, জিবিবি প্রকল্পটির পলিসি ধারকেরা দাবির ভিত্তিতে নিজ স্থানেই নগদ অর্থের সুবিধা পেয়ে থাকে। এ ছাড়া, দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫ কর্মদিবস পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে, যা এই শিল্পটিতে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।

দক্ষ এবং স্বচ্ছ দাবি তত্ত্বাবধায়ক

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স  লিমিটেড খুবই যতœসহকারে গ্রাহকের দাবি প্রদানে কাজ করে থাকে, যেহেতু এটি বিমা সেক্টরের উন্নতি এবং প্রচারে ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের দাবি প্রদানের অনুপাত ৯৭ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক বিশালসংখ্যক অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠী আর্থিক স্বাধীনতা ও অন্তর্ভুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারছে যারা অন্যথায় এসব সুবিধা গ্রহণের অযোগ্য বলে গণ্য হতো। বিমা দাবির প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছল করার জন্য একটি ওয়েবপোর্টালও চালু আছে যেখানে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিমা দাবির অবস্থা দেখা যায়।

সহজ দাবি এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের দক্ষ এবং আন্তরিক কর্মকর্তারা গ্রাহকের দাবি প্রক্রিয়াটির সহজ প্রবাহ নিশ্চিত করে যার ফলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্র্যাক গার্ডিয়ান বিমা ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে সহজেই জমা দেয়া যায়।

এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পটির আওতায় ৪০ হাজারেরও অধিক দাবি প্রদান করা হয়েছে যার আর্থিক মূল্য ১৬৯ কোটি টাকা। তারপরও, শুধুমাত্র সংখ্যা কখনই গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের অর্জনের সাফল্য বিচার করতে পারে না। পরিবারের সদস্য অথবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির মৃত্যুতে, প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করছে লাখো অস্বচ্ছল মানুষের জীবন এবং জীবিকা, সমগ্র বাংলাদেশজুড়ে। ক্ষুদ্র বিমা বাংলাদেশের অস্বচ্ছল ও দুস্থ মানুষের অসংখ্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। গার্ডিয়ান ব্র্যাক বিমা লাখো বাংলাদেশির দারিদ্র্য বিমোচনে এবং পরিবারের নির্ভরশীল ব্যক্তিটির অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুতে উপস্থিত ঝুঁকি মোকাবেলায় লক্ষ্যণীয় ভূমিকা পালন করছে।