জাবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদকসহ চারজনের পদত্যাগ

জাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৪২ | প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৫১

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ চারজন পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগকারী শিক্ষকরা হলেন সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, সদস্য অধ্যাপক মাহবুব কবির ও সদস্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা পদত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালেও শিক্ষক সমিতি নির্লিপ্তভাবে উপাচার্যের পক্ষ অবলম্বন করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে পদত্যাগ করছি।’

আর শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই সমাধানের চেষ্টা করছি। কিন্তু সমাধান না আসায় আজকের হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

‘শিক্ষকদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ হামলা করেছে’ এবং ‘কোনো শিক্ষক হামলার নির্দেশ দিতে পারেন কি না’- এমন প্রশ্নে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। ‘তোমরা (সাংবাদিকরা) যা দেখেছ তাই লিখবা’ বলে চলে যান।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্যপন্থী কয়েকজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ মদদেই ছাত্রলীগ এই হামলা চালায়। হামলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।

বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যায়। এসময় তারা জানান, উপাচার্য অধ্যপক ড. ফারজানা ইসলামকে অবমুক্ত করতেই তাদের এই যাত্রা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়ে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলে।

এরমধ্যেই বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাস শিবিরমুক্ত করতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেখানে যায় ছাত্রলীগ। তখনই উপাচার্যপন্থী আট-দশজন শিক্ষক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগকে ডাকতে থাকে এবং হাততালি দিয়ে ছাত্রলীগকে স্বাগত জানায়। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ সোহেল আহমেদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুল আলম, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যপক এটিএম আতিকুর রহমান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের প্রভাষক ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মোসাব্বের হোসেন, ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেনসিং- এর মো. মনির হোসাইন সহ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা।

হামলায় আহত শিক্ষকরা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানাসহ আরও কয়েকজন।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে- ৪৪তম আবর্তনের দর্শন বিভাগের মারুফ মোজাম্মেল, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মাহাথির মুহাম্মদ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাইমুম ইসলাম, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রনি, ৪৮তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের আলিফ মাহমুদ, অর্থনীতি বিভাগের উল্লাস, তম আবর্তনের দর্শন বিভাগের রুদ্রনীল, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সৌমিক বাগচীর নাম জানা গেছে।

এছাড়া ৪৪তম আবর্তনের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী ছন্দা ও ৪৭তম আবর্নের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাউদা নামের দুই নারী শিক্ষার্থীকেও মারধর করতে দেখা গেছে।

মারধরের সংবাদ সংগ্রহের সময় আহত সাংবাদিকরা হলেন- প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাইদুল ইসলাম, বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি আজাদ, বার্তাবাজারের প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন হিমু, বাংলা লাইভ টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল।

ছাত্রলীগের মারধরের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থী শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।’

আর হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।’

হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘চেষ্টা করেও আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বড় ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর আছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৫নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :