গ্রুপিংয়ে গতিহারা সাতক্ষীরা বিএনপি

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০৩ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৪

এম. বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা

মৎসজীবীদল নেতা আমান হত্যার পর থেকে নিষ্ক্রিয় হওয়া সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আজও। বর্তমানে জেলা বিএনপির কোনো কমিটিই নেই। গত ২৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি হলেও তিন মাসে তা অনুমোদন হয়নি। জেলা বিএনপির এই করুণ অবস্থার জন্য সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকেই দায়ী করেছেন প্রবীণ নেতারা।

সাতক্ষীরা জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ইতঃপূর্বে দলটি জামায়াতনির্ভর করে চললেও জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেত। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনে মৎসজীবীদল নেতা আমানকে নির্মমভাবে হত্যার কারণে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলটি। দলের কর্মী সম্মেলনে একজন ত্যাগী নেতার এমন নৃশংস হত্যায় মর্মাহত হয় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে দায়ী করেন তারা।

হত্যার পরদিনই কেন্দ্রীয় নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তিন মাস পর রহমতুল্লাহ পলাশকে সভাপতি ও আব্দুল আলিম চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

নতুন দায়িত্ব পেয়ে রহমাতুল্লাহ পলাশ ও আলিমের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি দেখা গেলেও হাবিব গ্রুপের বিরোধিতায় তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হতে পারেনি। তাদের অধিকাংশ কর্মসূচি ঘরের মধ্যে করতে দেখা গেছে।

তবে হাবিব সমর্থকদের দাবি পলাশ মাসের অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। এ কারণে তিনি দলকে চাঙা করতে পারেননি। তবে পলাশ সমর্থকরা দাবি করেছেন, তিনি ঢাকায় থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া নেতাকর্মীদের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ।

প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে পলাশকে সভাপতি এবং তারিকুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৮ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি অনুমোদন করান হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এতে জেলা বিএনপি আরও ঝিমিয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক নেতা জানান, পলাশ সাহেব অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন আর তারিকুল হাসান নেশা করেন। যে কারণে রাজনীতির ময়দানে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারেননি তারা। গত ২৪ আগস্ট আগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেটি কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য পাঠালেও হাবিবের বাধার কারণে তিন মাসেও অনুমোদন হয়নি।

এদিকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলও নিষ্ক্রিয়। ২০১৮ সালের জুন মাসে ছাত্রদলের জেলা কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু কমিটির সভাপতির বাড়ি বাঁশদাহ, সাধারণ সম্পাদক চন্দনের বাড়ি কলারোয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদকের বাড়ি শ্যামনগর হওয়ায় তাদের পক্ষে শহরের কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কমিটি গঠনের পর থেকে তাদের আন্দোলন বা কর্মসূচির কোনো প্রেস রিলিজও চোখে পড়েনি।

তবে সম্প্রতি আবু জাহিদ ডাবলুকে সভাপতি ও হাফিজুর রহমান মুকুলকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। এরপর তারা কয়েকটি কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এই কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন সাবেক নেতারা।

বর্তমানে গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা বিএনপি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এটা মানতে নারাজ বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, কেন্দ্রের ডাকে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণের চেষ্টা করেছি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়া এবং দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সভাপতি রহমতিুল্লাহ পলাশের মোবাইলফোনে কয়েকবার কল করলেও তার সাড়া মেলেনি। হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিএনপি নেতা আবু জাহিদ ডাবলু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ আমরা সুষ্ঠু রাজনীতি চাই। দলে মাদকাসক্ত উচ্ছৃঙ্খলদের স্থান না দিয়ে রাজপথের সৈনিক এবং পরিচ্ছন্নদের স্থান দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’