বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ তারকা কারা?

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৩৯ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৩৯

আশরাফুল আলম

বাংলাদেশের ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডব বলে একটি শব্দ দীর্ঘদিন থেকেই প্রচলিত। মাঠের খেলায় ও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ম্যাচের কঠিন মুহূর্তে এই পাঁচজনের কেউ না কেউই হাল ধরেন দলের। যেদিন পঞ্চপাণ্ডব ব্যর্থ হয় সেদিন দলের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। আর পঞ্চপাণ্ডব ভালো করলে দল জয় পায়, না হয় প্রতিপক্ষকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রায় প্রতি সিরিজেই দুই একজন তরুণ ক্রিকেটারকে সুযোগ করে দেয়। তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে অধিকাংশই প্রথম কয়েক ম্যাচ ভালো খেলে এরপর আবার হারিয়ে যায়। কেউ কেউ অবশ্য আবার ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো নতুন ক্রিকেটার তুলে আনার দিকে মনোযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। যাতে করে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত একটি দল গঠন করা যায়।

পঞ্চপাণ্ডব বলে খ্যাত মাশরাফি, সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকদেরও বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। মাশরাফি হয়তোবা আর কয়েকটি ম্যাচ খেলেই বিদায় নেবেন। সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকরা আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন জোর দিয়ে বলা যায় না। সৌম্য, সাব্বিররা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারছেন না। তরুণদের এগিয়ে আসা তাই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সময়ের সাথে সাথে সিনিয়র ক্রিকেটারদের উপর নির্ভরতা কমছে। এখন দল নির্দিষ্ট এক বা দুইজন ক্রিকেটারের উপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশ এখন যে জয়গুলো পায় তা দল হিসেবে ভালো খেলেই।

সর্বশেষ বিশ্বকাপ, ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং চলমান ভারত সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলীয়ভাবে ভালো পারফরম্যান্স লক্ষ্য করা গিয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিনটি ইউনিটেই খেলোয়াড়েরা তাদের নিজ নিজ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন। যার ফলে সাকিব, তামিম ছাড়াই ভারতের মতো ফর্মের তুঙ্গে থাকা দলকে হারাতে সক্ষম হয়েছে টিম টাইগার।

পঞ্চপাণ্ডবের সবাই একে একে বিদায় নেবে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট তার আপন গতিতেই চলবে। তবে বাংলাদেশের আগের ধারাগুলোর পরিবর্তন হতে চলেছে। এখন সিনিয়রদের পাশাপাশি নতুনরাও দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে।

ক্রিকেট বোদ্ধাদের অনেকে অবশ্য এখনই তরুণদের মাঝে ভবিষ্যত মাশরাফি, সাকিবদের দেখতে পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ যুবদলের সাবেক অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অনেকে বাংলাদেশ টিমের ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসেবে দেখছেন এই অলরাউন্ডারকে। মাঠে সবসময় চনমনে থাকতে দেখা যায় এই ক্রিকেটারকে। তার পারফরম্যান্স দেখে কেউ কেউ আগামী দিনের সাকিব আল হাসানও বলছেন তাকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে দীর্ঘদিন থেকেই একজন জেনুইন সিমিং অলরাউন্ডারের অভাব ছিল। সেই অভাব পূরণ করে বাংলাদেশ দলের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বল হাতে দুর্দান্ত সব ইয়র্কার আর লোয়ার মিডল অর্ডারে প্রয়োজন অনুসারে দায়িত্বশীল কিংবা ঝড়ো ইনিংস খেলার দক্ষতা রয়েছে এই অলরাউন্ডারের।

‘দিস ম্যান ইজ অ্যা সিরিয়াস এক্সপোনেন্ট অব ইয়র্কার’, ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশফ কথাগুলো সাইফউদ্দিন সম্পর্কে বলেছিলেন। তবে ইয়র্কার স্পেশালিস্ট সাইিউদ্দিন অবশ্য নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি দিতে পছন্দ করেন। তাঁর মতে, তিনি একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তিনি নিউজিল্যান্ডের বিধ্বংসী অলরাউন্ডার কোরি এন্ডারসনকে আদর্শ মনে করেন। ইংল্যান্ডের আরেক অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকেও পছন্দ করেন বাংলাদেশি এই তরুণ অলরাউন্ডার। ২০১৭ সালে শ্রীলংকা সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলে অভিষেক হয়েছিল সাইফউদ্দিনের। ইতিমধ্যেই সাইফউদ্দিন জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশের আরেক তরুণ তুর্কি আফিফ হোসেন। বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে রেকর্ড গড়ে আলোচনায় আসেন ১৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। বল হাতে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চমকে দেন সবাইকে। সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটিও এখন তাঁর দখলে। বল হাতে রেকর্ড গড়লেও নিজেকে মূলত ব্যাটসম্যান হিসেবে ভাবেন তিনি। আর তার ব্যাটিং ঝলক দেখা গিয়েছে সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে। মোসাদ্দেকের সাথে দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন আফিফ হোসেন।

তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম আস্থাশীল ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দারুণ শট খেলতে পারদর্শী এই ক্রিকেটার। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষেও ভালো পারফরম্যান্স করেছিলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। ম্যাচজয়ী ১২৬ রানের এক ইনিংস খেলে জাতীয় দলে তাঁর আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিলেন। গত ৩ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয়ে গেল বাংলাদেশি এই ব্যাটসম্যানের। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত কিছু শটে ২৬ রানের ইনিংস উপহার দেন বাংলাদেশ দলকে।

লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের কথা না বললেই নয়। ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। এরপর ৩ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে শিকার করেন ২ উইকেট। শুধু বোলিং নয়, তিনি একজন ব্যাটসম্যানও। তবে, এখনো ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাননি তিনি। এই ক্রিকেটারকে যদি ঠিকমতো নার্সার করা যায় তাহলে তিনি বাংলাদেশের বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।