তিতাসের মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনের ওপর শুনানি ১৪ নভেম্বর

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে একজন ভিআইপির (যুগ্ম সচিব) অপেক্ষায় প্রায় দুই ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখার কারণে অসুস্থ স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিচারপতিএফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলএবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আদেশের বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন তিনি।

আদালতে যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।

এর আগে বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।

ওই প্রতিবেদনে সরাসরি যুগ্ম সচিবকে দায়ী না করা হলেও ফেরি অপেক্ষমাণ রাখায় এক্ষেত্রে তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর তিতাসের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে দাখিল করে।ওই প্রতিবেদনে দেরিতে ফেরি ছাড়ার জন্য দায়িত্বরত ফেরিঘাটের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করেছে কমিটি। তদন্ত কমিটি যুগ্ম-সচিবের কোনো দোষ খুঁজে পায়নি।

পরে রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বরের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সে অনুসারে বুধবার (৬ নভেম্বর) এ প্রতিবেদন আসে।

প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির সভাপতি সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

এর আগে ৩১ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলে জনপ্রশাসন সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট।

অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয় এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ তদন্ত করাবেন জনপ্রশাসন সচিব। পাশাপাশি তিতাসের পরিবারকে কেন তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন জনস্বার্থে এ রিটটি দায়ের করেন।

রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন নৌপরিবহন সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতুসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া ও কাঁঠালবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ (১১) গুরুতর আহত হয়। ওইসময়তাকে খুলনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার আইসিইউ সুবিধা আছে এমন একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ২৫ জুলাই তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশেরওয়ানা হন।

পরে রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামে ফেরিটি ঘাটে যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সরকারের এ টুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুল সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন তাই ওই ফেরিকে অপেক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়।

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু এর মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মাঝপদ্মায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস।

ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এএমআই/এমআর