বাবার ‘আক্ষেপের’ কথা জানিয়ে দোয়া চাইলেন খোকাপুত্র

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জীবিত অবস্থায় দেশে ফেরার আকাঙক্ষা ছিলো অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারেননি দেশে। তবে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে মারা যাওয়ার পর ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে কফিনবন্দি করে দেশে আনা হয়েছে খোকাকে।

বৃহস্পতিবার সকালে কফিনবন্দি হয়ে খোকার লাশ পৌঁছায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাববন্দরে। সেখানে থেকে লাশ নেওয়া হয় সংসদ ভবন চত্বরে। সেখানে খোকার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে অল্প কিছু সময় কথা বলেন খোকাপুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।

অনেকটা ক্ষোভ ও দুঃখ ভরাকণ্ঠে খোকার ছেলে বলেন, ‘উনি ( খোকা) প্রায়শই একটা কথা বলতেন, যে দেশ নিজের হাতে স্বাধীন করেছি সে দেশে কি আমাকে বাক্সে করে ফেরত যেতে হবে?’ পাসপোর্ট না পাওয়ার বিষয়েও জীবিত অবস্থায় স্ব^জনদের কাছে আক্ষেপ করে গেছেন বলেও জানান বড় ছেলে ইশরাক।

তবে নানা অনিশ্চয়তার পরও ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বাবার মরদেহ দেশে আনার সুযোগ করে দেয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান ইশরাক। একইসঙ্গে বাবার পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চান, যাতে তিনি জান্নাতবাসী হন। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাদেক হোসেন খোকার প্রথম নামাজে জানাজা পর্বে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সবার কাছে দোয়াও চান ইশরাক। জানাজায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তোফায়েল আহম্মেদ, আ স ম ফিরোজ, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, রাশেদ খান মেনন, মশিউর রহমান রাঙ্গা, ড.  মাহবুব উল্লাহ, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম অংশ নেন।

জানাজায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা আপনাদের অতি পরিচিত। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে গত ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। আজকে আমার প্রথমবার সুযোগ হয়েছে সংসদ চত্বরে পা রাখার। আমি এর আগে কোনোদিনও এখানে আসিনি। যদিও আমার বাবা তিনবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবার জানাজা। এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, বাবা আমার সঙ্গে নেই। তবে উনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। এখানে আগত সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যসহ অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন, আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা ওনার জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন। তার সর্বজনীন যে একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটা আপনারা আবার প্রমাণ করে দিয়েছেন।’

খোকাপুত্র বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি গত পাঁচ বছর তার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। উনি প্রায়শই একটা কথা বলতেন, যে দেশ নিজের হাতে স্বাধীন করেছি সে দেশে কি আমাকে বাক্সে করে ফেরত যেতে হবে?’

খোকার ছেলে বলেন, ‘আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। আপনারা সবাই দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে চলেছেন, যদি কোনো ভুল করে থাকেন আমি উনার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারও যদি কোনো দেনা-পাওনা থাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘উনি বাংলাদেশে এসেছেন ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে। ওনার পাসপোর্ট আবেদন করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। পরবর্তীতে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় উনি শেষ দিকে অনেক আক্ষেপ করেছেন। বলেছিলেন, যে দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন করলাম সেই দেশের পাসপোর্ট আমি পেলাম না!’

তিনি আরও বলেন, ‘উনার বুকের চাপা কষ্ট রয়ে গেল যে, উনি শেষ নিঃশ্বাস এই বাংলাদেশের মাটিতে থেকে ত্যাগ করতে পারলেন না। তারপরও আমি ধন্যবাদ জানাব সরকারকে এবং অন্যান্য যারা সহযোগিতা করেছেন উনার মরদেহ এখানে নিয়ে আসার জন্য। উনার অন্তিম ইচ্ছা, আমি যেদিন পৌঁছায় ওই দিনই উনি শেষ কথা বলতে পেরেছিলেন। তারপর উনি আর কথা বলতে পারেননি।

গত সোমবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান অবিভক্ত ঢাকার সবশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।

(ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/বিইউ/এমআর)