পঞ্চগড়ে বাসচাপায় প্রাণ গেল নবদম্পতিসহ সাতজনের

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪১ | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২০

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নবদম্পতিসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলা শালবাহান মাঝিপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

লাবু ইসলামের সঙ্গে মুক্তি বেগমের বিয়ে হয় ৪১ দিন আগে। শুক্রবার দুপুরে তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন দাওয়াত খেতে। দুপুর দেড়টার দিকে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া জাতীয় মহাসড়কের মাগুরমারি চৌরাস্তা এলাকায় তাদের বহনকারী ইজিবাইকটিকে চাপা দেয় কাজী ব্রাদার্স নামে তেঁতুলিয়াগামী যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে এই নবদম্পতি এবং আরেক দম্পতিসহ আরও তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

নিহত অন্যরা হলেন, সদর উপজেলার সুরিভিটা এলাকার আকবর আলী (৭০) ও তার স্ত্রী নুরিমা বেগম (৫৫), একই উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চেকরমারি এলাকার ইজিবাইক চালক রফিক (২৮), সাতমেরা ইউনিয়নের রায়পাড়া এলাকার ফরহাদ হোসেন মাকুদ (৪৫) এবং সাহেবজোত এলাকার আকবর আলীর স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৪২)।

বছরখানেক আগে একই সড়কে ট্রাকের চাপায় ১২ জন মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জেলা শহর থেকে কাজী ব্রাদাসের যাত্রীবাহী বাসটি তেঁতুলিয়া যাচ্ছিল। মাগুরমারি এলাকায় একটি ছাগলকে পাশ কাটাতে গিয়ে বাসটি বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দিলে ইজিবাইকটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এক পর্যায়ে ইজিবাইকটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাসের ভেতরে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকের মধ্যে থাকা দুই দম্পতিসহ চালক মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় অন্য দুজনকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তারাও মারা যান।

পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দুই ঘণ্টার বেশি সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এই দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয়রা হাইওয়ে পুলিশের অবহেলাকে দায়ী করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে ঘটনার পরপর পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী ও জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশপাশি নিহত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।

প্রত্যক্ষদর্শী নুর আলম বলেন, যাত্রীবাহী বাসটি একটি ছাগলকে পাশ কাটাতে গিয়ে ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দেয়। ইজিবাইটি দুমড়ে মুচড়ে বাসের নিয়ে চলে যায়। ওই অবস্থাতেই ইজিবাইকটিকে প্রায় একশ মিটার ছেঁচড়ে নিয়ে যায় বাসটি। ঘটনাস্থলেই আমরা পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। বাস চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৮নভেম্বর/জেবি)