‘অনেক সাংবাদিক নৈতিকতায় কম্প্রোমাইজ করছেন’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০১
ফাইল ছবি

সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকদের গুরুত্ব কি দিন দিন কমে যাচ্ছে? যদি এমনটাই হয় তাহলে কেন এই পরিস্থিতি? প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সব ক্ষেত্রেই অবক্ষয় হয়েছে৷ অবক্ষয় হয়েছে সাংবাদিকতারও৷ প্রাপ্তির আশায় অনেকই নৈতিকতায় কম্প্রোমাইজ করছেন৷ ফলে সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে৷

আপনারা যখন শুরু করেছেন তখন সাংবাদিকতা কেমন ছিল, আর এখন কেমন?

আমরা যখন শুরু করেছি, তখন আমাদের যারা পূর্বসূরি ছিলেন তারা ছিলেন আমাদের আদর্শ৷ বর্তমানে সেই সুযোগটা কমে গেছে৷ এখন মিডিয়ার বিস্তৃতি ঘটেছে৷ সাংবাদিকদের পরিবার অনেক বড় হয়েছে৷ এখন প্রযুক্তির কারণে অত বেশি তথ্য রাখতে হয় না৷ আগে তথ্য নিতে যেতে হতো৷ আর এখন আপনি চাইলে গুগলে গিয়ে বা ইন্টারনেটে গিয়ে সব তথ্যই পাচ্ছেন৷ সেটা শুধু দেশি না, বিদেশি রেফারেন্সও আপনি পাচ্ছেন৷ ফলে সাংবাদিকতায় এখন পরিশ্রমের প্রবণতা কমে গেছে৷ নীতি নৈতিকতা বা বস্তুনিষ্ঠতাও এখন সংখ্যার কারণে কমে যাচ্ছে৷ আগে মালিকেরা একটা ভিশন নিয়ে সংবাদপত্র বের করতেন৷ এখন করপোরেট কালচারের কারণে এটা পেশার মতো না হয়ে চাকরির মতো হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে নীতি নৈতিকতায়ও একটা কম্প্রোমাইজের ভাব চলে এসেছে৷ এসব কারণে সাংবাদিকতাও এক ব্যবসায়িক জায়গায় চলে গেছে৷

সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাংবাদিকেরা আগে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতেন, রাজনীতিবিদ সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছেও সাংবাদিকদের গুরুত্ব ছিল, এখন এটা নেই কেন?

এর দু'টি কারণ৷ আমাদের যারা পূর্বসূরি ছিলেন তাদের একটা নীতি আদর্শ ছিল৷ এ কারণে তাদের অনেক সাহস ছিল৷ আদর্শ বা ভিশন বাস্তবায়নে তারা সাংবাদিকতা করতেন৷ রাষ্ট্রের কাছে কোন স্বার্থের জন্য বা পাওনার জন্য তারা লালাইতো ছিলেন না৷ সব জায়গায়ই তো অবক্ষয়৷ তাই অন্যান্য পেশার মতো আমাদের মধ্যেও প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছে৷ প্রাপ্তির জন্য তাই অনেকেই কম্প্রোমাইজ করছে সরকার বলুন আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বলুন বা অন্য কোনো স্বার্থের কাছে৷ এই কারণে সাংবাদিকদের প্রতি আগে যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল এখন সেটার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে৷ আরেকটি বিষয়, সেটা হলো আগে আমাদের যে ইউনিয়ন ছিল সেটা ছিল দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে৷ ১৯৯১ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পর সাংবাদিকরাও রাজনীতিকভাবে বিভক্ত হয়ে যান৷ ফলে সরকার বা করপোরেট হাউজগুলোও সাংবাদিকদের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন৷ পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছেও মিডিয়া অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে৷ তাদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজও করতে হচ্ছে৷

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? রাষ্ট্র ব্যবস্থা সাংবাদিকরা না সংবাদপত্রের মালিকরা?

সবকিছু মিলিয়েই৷ সাংবাদিকতা তো বিচ্ছিন্ন কোন অংশ না৷ সমাজেরই একটা প্রতিচ্ছবি৷ টোটাল ব্যবস্থার একটি পার্ট হলাম আমরা৷ আয়না যদি ভালো না হয় তাহলে প্রতিচ্ছবি ভালো হবে না৷ সমাজ, রাষ্ট্র যদি আয়না হয় তাহলে সাংবাদিকরা প্রতিচ্ছবি৷ করপোরেট কালচারে মালিকেরা অনেক সময় সাংবাদিকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন৷

সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন আপনি?

আমি যে অবক্ষয়ের কথা বলেছি, সেটার শিকার কিছুসংখ্যক সাংবাদিক হতে পারেন৷ কিন্তু এই পেশার শাশ্বত একটা চরিত্র আছে৷ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ, করপোরেট চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ তারপরও কিন্তু সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করতে চান৷ এটাই সাংবাদিকতার বড় শক্তি৷

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অবস্থা এখন কেমন?

এটা আসলে আপেক্ষিক৷ আপনার কাছে যেটা বস্তুনিষ্ঠ, সেটা আরেকজনের কাছে বস্তুনিষ্ঠ নাও হতে পারে৷ এটা হলো দৃষ্টিকোণ৷ আপনি কিভাবে দেখেন৷ যেটা কর্পোরেট মিডিয়া তারা বস্তুনিষ্ঠতা একভাবে দেখবে, আবার যারা রাজনৈতিক মুখপাত্র তারা বস্তুনিষ্ঠতা আরেকভাবে দেখবে৷ আরেকটা হলো প্রফেশনাল মিডিয়া৷ শাশ্বত যেটা সত্য তারা সেটাই লিখবে, তাদের কাছে এটা বস্তুনিষ্ঠতা৷ মিডিয়ার বিচারক কারা? দর্শক বা পাঠক৷ বস্তুনিষ্ঠতা না থাকলে আপনি কিছু চমক দিতে পারেন কিন্তু দিনশেষে টিকে থাকতে পারবেন না৷

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ কমে যাচ্ছে? এর কারণ কি সরকারের বিধি নিষেধ নাকি সেলফ সেন্সরশিপ?

সব মিলিয়েই কিন্তু৷ সরকারই একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি না৷ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও কিন্তু এখানে বিষয়৷ তবে আগের তুলনায় রাজনীতিবিদদের কাছে সাংবাদিকদের নিয়ে চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে৷ পাশাপাশি মিডিয়াতে যে করপোরেট পুজির অনুপ্রবেশ হচ্ছে সেটা ভালো টাকাও হতে পারে, কালো টাকাও হতে পারে৷ পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দাতারাও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে৷ এসবের ফলে কোন কোন সময় মিডিয়ার সাহসী ভূমিকায় টানাপোড়েন দেখা দেয়৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কী সাংবাদিকতার গতি কমিয়ে দিয়েছে?

আমি মনে করি না৷ কারণ প্রযুক্তি যেমন আমাদের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, আবার অন্যদিকে প্রযুক্তি অনেক সময় ঝুঁকিও তৈরি করে৷ অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় দেখা যায় অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷ অনেক সময় তাদের উদ্দেশ্যমূলক এজেন্ডা থাকে, দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভূমিকা দেখা যায়৷ এর ফলে অনেক সময় সমাজে রাষ্ট্রে বা ব্যক্তিজীবনেও সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :