জামালপুরে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি

পুকুর ভরাট প্রকল্পে পুকুরচুরি!

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৮

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা গুনারীতলা ইউনিয়নের ৫৩০ জন অতিদরিদ্র শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দের সিংহভাগই হরিলুট করা হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পের শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এলাকাবাসী অতিদরিদ্রদের টাকা আত্মসাৎ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দাবি করেছেন, তাকে  হয়রানি করতেই এই অভিযোগ করা হয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুই কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বরাদ্দকৃত কাজের অংশ হিসেবে মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। মাঠ ভরাট করার কথা বলা হলেও বিদ্যালয়ের একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রকল্পটির জন্য ৫৩০ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে মাটি কেটে পুকুরটি ভরাট করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমরান খান বাছেদ প্রকল্পটির সভাপতি হলেও মূলত ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আয়না নিজেই কাজটির তত্ত্বাবধান করেন। প্রকল্পের শুরু থেকেই তিনি শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে পাশের ডোবায় ড্রেজার বসিয়ে বালিমাটি দিয়ে পুকুরটি ভরাট দেখিয়ে পুরো টাকা উত্তোলন করেন। পরে ঘটনাটি ফাঁস হলে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ইউপি চেয়ারম্যান আয়নার বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে নতুন করে ফের ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কয়েকদিন ধরে মাটি ভরাটকাজ শুরু করেছেন বলে জানায় এলাকাবাসী।  গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রকল্প স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, পাইপ দিয়ে ড্রেজারে বালিমাটি এনে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে কোনো অতিদরিদ্র শ্রমিক নেই। প্রকল্পের কোনো সাইনবোর্ডও নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাজু অভিযোগ করে বলেন, গত অর্থবছরের এই কাজ এখন বাস্তবায়ন দেখানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরপরও সেখানে শ্রমিক দিয়ে কাজ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়ম রয়েছে সেখানে তিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কাজ করছেন।

প্রকল্পটির সভাপতি গুনারীতলা ইউপি সদস্য ইমরান খান বাছেদ অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সময়মতোই কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। কাজের বিলও তুলেছি।’ শ্রমিকদের দিয়ে কিছু কাজ করেছি আবার ড্রেজার দিয়েও কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। তবে কতজন শ্রমিককে মজুরি দেয়া হয়েছে এবিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আয়না অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুকুর ভরাট কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এখন যে ড্রেজার দেখলেন তা প্রকল্পের কাজ নয়। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আরও কিছু বালিমাটি ভরাট করে দিচ্ছি। স্থানীয় একটি মহল হয়রানি করার উদ্দেশে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’  

মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পুকুর ভরাট প্রকল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলাল অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে পুকুর ভরাট প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করেছি। তদন্তকালে উপজেলার প্রমাসনের অনুমোদিত তালিকাভুক্ত অতিদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়নি বা এরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ড্রেজার দিয়ে বর্তমানে মাটি কাটা হচ্ছে এমন প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের জন্য প্রতিবেদনসহ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/৯নভেম্বর/জেবি