শিগগির পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রে

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরীর নথি প্রস্তুত

নজরুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:৪০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া পলাতক খুনিদের দেশে ফেরানো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা চেষ্টা হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। এবার পলাতক ছয় খুনির একজনকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী রাশেদ চৌধুরীর বিচারেরর নথি চেয়েছে দেশটি। আর বাংলাদেশও ইতিমধ্যে রাশেদ চৌধুরীর মামলার সব কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য তৈরি করেছে। খুব শিগগির মামলার নথি ওয়াশিংটনে পাঠাবে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েল নথি চেয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় রাশেদ চৌধুরীর মামলার নথি তৈরি করেছে। দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রে নথিটি পাঠানো হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়টি। তারা উদ্যোগী হলে বাংলাদেশ এর সুফল পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা যখন নথি চেয়েছেন, তখন এটি একটা অগ্রগতি বলে মনে করা যায়।

গত মঙ্গলবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস। সফরের প্রথম দিনে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি অ্যালিস ওয়েলস তুলেছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলেছি, রাশেদ চৌধুরী আপনাদের দেশে লুকিয়ে আছে। আমরা তাকে ফেরত চাই। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচারের নথিপত্র দেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব এবং তারপর আপনাদের জানাব।’

এর আগে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ ফেরত চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র তা বারবার এড়িয়ে যায়। তাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সর্বশেষ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।

এই নথি চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর রাশেদ চৌধুরীর মামলার নথি চেয়েছে, এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। আমরা অবশ্যই চাইব, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে যারা শাস্তি পাননি তাদের দেশে ফিরিয়ে শাস্তি কার্যকর করা হোক। আর বিষয়টি নির্ভর করছে তারা যে দেশে পালিয়ে আছে সে দেশের আন্তরিকতার ওপর। তারা উদ্যোগ নিলেই এটা সম্ভব।’

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যে যেখানেই থাকুক, তাদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে খুনিরা। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য ছয় আসামি খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক। তাদের মধ্যে নূর কানাডায়, রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি।

পলাতক ছয়জনের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ জারি করা আছে। ২০০৯ সালে এই নোটিশ জারির পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে কানাডায় বসবাসকারী বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে নানা ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটির আদালতের নিয়ম অনুযায়ী সেদেশে আশ্রয় নেওয়া কোনো ব্যক্তি আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাকে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ। তবে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কানাডার আদালতে বিচারাধীন একটি মামলার রায় এ মাসে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই রায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে দেশে ফেরানোর পথ খুলতে পারে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছর বছর পূর্ণ হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটি বেশ ঘটা করে পালন করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতের আগে অনন্ত নূর ও রাশেদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে সরকার।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা সাধারণত মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফেরত দেয় না, দিতে চায় না। তবে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে কথা হলে তাদের একটাই ভাষ্য, এদের হ্যাংগ অর্থাৎ ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মারা হবে না এই মর্মে ফেরত দেওয়া যেতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাশেদ চৌধুরীর নথি চাওয়ার বিষয়টি ‘নিউ ডাইমেশন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :