দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে বুলবুলে’র আঘাত

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:২১ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ অনেকটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঝড়টি। ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে বুলবুলূ। ঝড়টি দুর্বল থাকায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। রবিবার ভোর নাগাদ এটি বাংলাদেশ পার হতে পারে।  

ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক বিষয়ে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালক আয়শা খাতুন জানান, ঝড়টি বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিমি। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে বুলবুল।

আন্দামান সাগরের সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি নানা সময়ে দিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এর গতিও ওঠা-নামা করেছে একাধিকবার। 

শুক্রবার ও শনিবার এটি যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তাতে মনে করা হয়েছে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানবে উপকূলে। কিন্তু এর গতি কিছুটা কমে এসেছে।

এরই মধ্যে শনিবার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করে। সুন্দরবনের বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড, হিরন পয়েন্ট, দুবলারচর, মেহের আলীর চর, মাঝেরচর, আলোরকোলে আছড়ে পড়েছে প্রবল ঝড় বইছে। সেখানকার শুটকি পল্লী ও কিছু কাঁচাঘর এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে একই সঙ্গে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট।

এদিকে দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় বুলবুলের প্রভাবে সাতটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।

শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ও চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে তিনজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- পশ্চিম চর উমেদ; ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ মাল, তার ছেলে ইমরান ও তিশান।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম জানান, রাত সাড়ে নয়টার দিকে তীব্র বাতাসের ঝাপটার আওয়াজ শুনতে পান। মুহূর্তের মধ্যে ওই এলাকার রশিদ মালসহ একই বাড়ির আরও দুইটি ঘর বিধ্বস্ত হয়। এ সময় বাড়ির গাছপালাও উপড়ে পড়ে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঝড় পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ৩০ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

ইতোমধ্যে ৩ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ লাখ লোককেও ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও বাগেরহাট এ মোট ৯টি এলাকার প্রতিটিতে ১০ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল, এক লাখ টাকা করে গোখাদ্য বাবদ এবং এক লাখ টাকা করে শিশু খাদ্য বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৫ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা  এবং মোট ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সব সেনানিবাস, ঘাঁটি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার।

‘ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’

ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চার ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। আর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/ইএস