কীর্তন বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপরিহার্য উপাদান

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১৫ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৪

কীর্তন বাঙালির মাননবতাবাদী ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির এক অপরিহার্য উপাদান। ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে তা এখন প্রায় সংকীর্ণ ধর্মীয় সংগীতের গণ্ডিতে আটকে গিয়েছে।

গত শুক্রবার রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট আয়োজিত ‘বাংলা কীর্তনের বিবর্তন’ শীর্ষক ৩৬৩তম সাপ্তাহিক পাবলিক লেকচারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন নাট্যকর্মী ও সংগঠক হুমায়ূন আজম রেওয়াজ।

বাংলা কীর্তনের প্রায় পাঁচশ বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বক্তা হুমায়ূন আজম রেওয়াজ বলেন, পনের-ষোল শতকে বাঙালি-সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। হুসেন শাহী শাসনামলে মুসলমান সমাজের বিকাশ দ্রুততর হচ্ছিল এবং অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য এই ধর্মাশ্রিত সমাজ কাঠামোকে বিপর্যস্ত করে তুলছিল। আলাউদ্দিন হুসেন শাহর উদার মনোভাব ধর্মীয় ক্ষেত্রে একটি সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটেই সময়ে শ্রী চৈতন্যদেব (১৪৭৮-১৫৩৩) আবির্ভূত হন তাঁর নব্য বৈষ্ণব দর্শন নিয়ে। চৈতন্যদেবের মানবতাবাদী ও সমন্বয়বাদী উদার দর্শনেরই বার্তাবহ আকারে কীর্তনের উদ্ভব ঘটে। চৈতন্যের বর্ণপ্রথাবিরোধী অবস্থান, মানবতার জয়গান , সমন্বয়বাদী ও উদার চিন্তার বাহন হিসেবে গড়ে উঠেছিল কীর্তন। পরবর্তীতে নানা বাঁকবদলের খেয়ায় কীর্তন আজ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

মূল বক্তৃতার পর উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক, সংগীতানুরাগী।

রিডিং ক্লাবের প্রধান নির্বাহী জুলফিকার ইসলাম বলেন, কীর্তন আমাদের সাংগীতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ অনালোচিত ধারা। বাংলাদেশে বর্তমানে মানববিদ্যা চর্চার আকাল চলছে। এসময়ে এই আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক।

সমাপনী বক্তব্যে রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান রাশেদ রাহম বলেন, চৈতন্যেদেবের আন্দোলন হিন্দুধর্মের উদারীকরণে ভূমিকা রাখলেও তার রক্ষণশীল প্রবণতাগুলো দূর করতে পারেনি। চৈতন্যের শিষ্যদের মধ্যে কেবল যবন মুহাম্মদ নামে একজন মুসলমানের নাম পাওয়া যায় যিনি তার অনুসারী হয়েছিলেন। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে কীর্তনকে জনপ্রিয় করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তবু কালের বিবেচনায় প্রগতিশীল হলেও চৈতন্যের আন্দোলন শেষপর্যন্ত ছিল একটি সুনির্দিষ্ট ধর্মগোষ্ঠীর সংস্কারান্দোলন। তবে বাংলার বৃহত্তর সমাজে বহুত্ববাদী ও সম্বন্বয়বাদী যে-ধারার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে কীর্তনের অবদান অনস্বীকার্য।

ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/আরআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :