কেন্দ্রের কাঠগড়ায় ফারুক চৌধুরীর হাতজোড়

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ২০:০০

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশে দাঁড়িয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আর আসাদের সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন তার সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।

এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফারুক যখন আসাদের দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে ছিলেন আসাদ তখন তার দিকে তাকাচ্ছিলেনও না। আরেকটি ছবিতে আসাদকে সরে যেতে দেখা যাচ্ছে।

ছবিটি গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের। এ দুই নেতার দীর্ঘ দিনের বিরোধ নিয়ে সেদিন তাদের দাঁড় করানো হয়েছিল কেন্দ্রের কাঠগড়ায়। সেখানেই হাতজোড় করেন রাজশাহীর আলোচিত নেতা ফারুক চৌধুরী।

শনিবার রাতে একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। তিনি ফারুক চৌধুরীরই অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারপর থেকে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ছবিটি পোস্ট করছেন। অনেকেই পাঠাচ্ছেন ম্যাসেঞ্জারে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একটি সূত্রের দাবি, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ওমর ফারুক চৌধুরীকে আসাদুজ্জামান আসাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। তখন ফারুক চৌধুরী করজোড় করে ক্ষমা চান। অভিমানে আসাদ তখন তার দিকে তাকাননি। কথাও বলেননি। ওই বৈঠকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য আগামী ৬ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেয়া হয়। কেন হাতজোড় করেছিলেন, জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যারা ছবিটা ফেসবুকে পোস্ট করছেন- তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদেরই জিজ্ঞেস করেন।

যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি তো তার দিকেই তাকাইনি। তাই হাতজোড় করার দৃশ্যটি তখন দেখিনি। পরে ছবিতে দেখছি। ফারুক চৌধুরী কিছু বলছিলেন কিনা জানতে চাইলে আসাদ বলেন, ক্ষমা চাই- এ ধরনের কিছু বলছিলেন।

ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, টাকার বিনিময়ে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে চাকরি দিয়েছেন। অনেকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার হাত থেকেই ফুল নিয়ে।

এসবকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে ওঠে।

ফলে গত ২৩ মাস ধরে ওমর ফারুক চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না। সম্প্রতি দলীয় একটা সভায় আসাদুজ্জামান আসাদ ফারুককে ‘রাজাকারের সন্তান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন।

সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের ৬৬ সদস্যের মধ্যে আসাদ ছাড়াই ৪১ জন ফারুকের বিরুদ্ধে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এসব কোন্দলের জেরে গত ১৩ অক্টোবর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত দলের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় ফারুক এবং আসাদকে বক্তব্য দিতে দেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। সেদিনই তারা এ দুই নেতাকে কেন্দ্রে তলব করেন। নির্ধারিত ৮ নভেম্বর তারা কেন্দ্রে গেলে ফারুক ক্ষমা চান।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/এলএ)