‘বুলবুলে’ বাগেরহাটে ভেসে গেছে সাত হাজার মাছের ঘের

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:২৪ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩০

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

উপকূলীয় বাগেরহাট সাদাসোনাখ্যাত চিংড়ির জন্য সুপরিচিত। এই জেলার ৮০ ভাগ মানুষই এই চাষের সাথে জড়িত। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’র তাণ্ডবে এই জেলার সাত হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে চাষিদের কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের এই আর্থিক ক্ষতি কীভাবে পোষাবে তারা জানে না। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

পাঁচ বিঘা জমিতে ধারদেনা করে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয় করে ঘেরে বাগদা, গলদা ও সাদা মাছ চাষ করেছিলেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামের শেখ সেলিম। তিনি সোমবার দুপুরে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে মাছের ঘের তলিয়ে গলদা চিংড়ি ও সাদা মাছ বের হয়ে গেছে। চিংড়ি বিক্রি করেছি তবে এখনো আসল টাকাই ওঠেনি। এখন আমি সর্বশান্ত। এই ক্ষতি কী করে পোষাব বুঝতে পারছি না।

চাষিরা বলছেন, এই জেলায় কয়েক হাজার মানুষ মাছ চাষে জড়িত। চাষিদের সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আতঙ্কে থাকতে হয়। এছাড়া তো মাছের ভাইরাস রোগসহ নানা সমস্যা তো লেগেই থাকে।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিদুল ইসলাম সুমন অভিযোগ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, উপকূলীয় বাগেরহাট জেলা দুর্যোগপ্রবণ একটি জেলা। প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন এখানকার মাছ চাষিরা। সরকারের মৎস্য বিভাগ দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ঠিকই কিন্তু তাদের কোনো সাহায্য দেয়া হয় না। এই চিংড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিকে প্রণোদনা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বাগেরহাটের মৎস্য বিভাগের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. খালেদ কনক ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশের চিংড়ি রপ্তানিতে বাগেরহাটের নাম অন্যতম। এই জেলায় ৭৮ হাজার ৭০৯টি মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাগদা ও গলদা চিংড়ির উৎপাদন লক্ষমাত্রা প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিকটন। আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে হয়ে যাওয়া অবিরাম বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির চাপে জেলার সাত হাজার ২৩২টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এই এলাকার চাষিদের। এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে প্রণোদনা ও আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ওই কর্মকর্তা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ তোড়ে সরবরাহ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগবে বলে মনে করছে জেলার পল্লী বিদ্যুৎ।

সোমবার বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে এ জেলার ছয় হাজার ২০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইনের মধ্যে ৮০৫ কিলোমিটার তার ছিঁড়ে গেছে।

এছাড়া ২০৫টি খুঁটি ও ১২৩টি ‘ক্রস আর্ম’ ভেঙে গেছে এবং ৫০টি ট্রান্সফর্মার ও ১৫০টি পল্লী বিদ্যুতের মিটার নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মেরামতে দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক রাত-দিন কাজ করছে বলে জানান জাকির হোসেন।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’ বাগেরহাটের ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টিতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার। ঝড়ে এই জেলায় ৩৫ হাজার ৭৭৫টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং আট হাজার ৭৮৮টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/জেবি)