ধন্যবাদ প্রিয় ঢাকাটাইমস সম্পাদক

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫১

দেলোয়ার হোসেন

আমি হোমসিক টাইপের মানুষ। বিদেশ বেড়াতে ভালো লাগে বটে, কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারিনা, নাড়ির টানে। সেই আমি কিনা সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রামে। এবং বড্ড অসময়ে!

পরিবার, প্রিয় মানুষ, চিরচেনা  প্রকৃতি, চেনা রাস্তাঘাট, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, মা-বাবা ও আদরের ছোট বোনটার কবর, আরও যে কত  কি; মাথা থেকে সরাতে পারি না কিছুতে। দেশ যে কি জিনিস, সেটা বোঝা যায় বিদেশ থেকে। আমি যেটা এখন অনুধাবন করছি বুকের গভীর থেকে।

অনিয়মিত বেতন, নিউজ করার কারণে নানান সময় নানা হুমকি ধামকি, কখনও আবার পত্রিকায়ই বন্ধ হয়ে গেছে আর্থিক অনটনের কারণে। নতুন চাকরি খোঁজার টেনশন, এরপর চাকরি রক্ষা করার চাপ- এমনি করেই কেটেছে সাংবাদিকাতার দীর্ঘ পথ। তারপরেও সাংবাদিকতা ভালোবেসেছি এবং ভালোবেসেছি বলেই মিডিয়ার মহা অনিয়শ্চতা ও কণ্টকাকীর্ণ রাস্তাতে হেটেছি মহা সুখে! প্রবাসের অবুঝ হৃদয় সেই সুখ যেন খুঁজে ফিরছে নিরন্তর।

বিশেষ করে সাংবাদিকতার শেষ কটা বছর ভীষণ মিস করছি আমি। আগে পরে না ভেবে বাংলানিউজের ‘বিশেষ প্রতিনিধি’র চাকরিটা হুট করে ছেড়ে ভীষণ বিপদে পড়েছিলাম। ভুল সিদ্ধান্তটার কারণে যথেষ্ঠ মূল্য দিতে হয়েছে আমাকে। আসলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় ‘ওয়াইজলি’, বোকার মতো, হুট করে নয়। রেগে যাওয়ার আরেক অর্থ তো হেরে যাওয়াই। সেই হেরে যাওয়া থেকে খুব, খুব শিক্ষা হয়েছে আমার।

কঠিন সময়ে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঢাকাটাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন। ডায়নামিক সাংবাদিক হিসেবে তাকে চিনতাম। সঙ্গে তিনি একজন উদার ও ভালো মানুষও। দেখেছি তার অসাধারণ অনেক গুণাবলী। চাকরি দিলেন, ভালো বেতন দিলেন এবং সঙ্গে সম্মানও। তখন দৈনিক ঢাকাটাইমস বের হয়নি। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সপ্তাহিক ‘এই সময়’ নিয়ে ঢাকাটাইমস পরিবার। এর আগে বড় বড় মিডিয়া হাউজ ও নামকরা সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু আমার কাছে এই হাউজটাকে অন্যরকম, ব্যতিক্রমী মনে হয়েছিল শুরুতেই।

ক্রিয়েটিভি এবং নিজেকে প্রমাণ করার কি চমৎকার জায়গা ঢাকাটাইমস! তরুণ ডায়নামিক সম্পাদক, সঙ্গে একঝাঁক মেধাবি সংবাদকর্মী। সব মিলে মাঝারি ও ছিমছাম এ মিডিয়া হাউজটাকে আমার দারুণ মনে ধরল। ঢাকাটাইমসের প্রতি অন্যরকম এক মমতা তৈরি হতে লাগল এবং দিনে দিনে সেটা গভীরতর হয়েছে।

মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেছে কর্মীদের প্রতি সম্পাদকের উদারতায়। দেশের অন্যতম বড় গ্রুপ অব ইন্ডাট্রিজ র‌্যাংগস কর্তৃক প্রকাশিত দৈনিক সকালের খবরে বছর চারেক চাকরি করেছি। সেখানেও টানাপোড়েন দেখিছি। বেতন প্রতিমাসে হয়েছে বটে, কিন্তু কখনও পাঁচ তারিখের মধ্যে দিতে পারেনি বা দেয়নি। ১৫, ২২/২৫ তারিখে। কখনও আবার বেতন হয়েছে ভেঙে ভেঙে। কি যন্ত্রণা!

ঢাকাটাইমসে এসে সেই যন্ত্রণার অবসান হয়েছে। যেন সরকারি চাকরি। কি আনন্দ! ৪-৫ তারিখের মধ্যেই বেতন! এবং যতদিন এখানে ছিলাম কখনও ৪/৫ তারিখে বেতন পাবার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হইনি। সময়মত কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার প্রচণ্ড তাড়া ও আন্তরিকতা দেখেছি সম্পাদকের মধ্যে। কর্মচারীদের প্রতি তার  মমতায় মুগ্ধ হয়েছি বারবার। ঢাকাটাইমসের কর্মী এখন আর আমি নই। কিন্তু সম্পাদকের একটা কথা আমার এখনও মর্ম স্পর্শ করে আমার। কখনও চোখে জল এসে যায়। মিটিংয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘বেতন নিয়ে আপনারা চিন্তা করবেন না। দরকার হলে আমার কিডনি বিক্রি করে হলেও আপনাদের বেতন দেব।’

টাকা পয়সা তো অনেকেরই আছে। কর্মচারিদের বেতন নিয়ে কতই না নাটক চলে বাংলাদেশে। ব্যাংকে শত শত কোটি টাকা, অথচ তারই কর্মচারীদের রাস্তায় নামতে হয় বেতনের দাবিতে। সেই দেশেরই অলাভজনক একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক যখন কিডনি বিক্রি করে হলেও কর্মচারীদের নিয়মিত বেতনের প্রতিশ্রুতি দেন, তখন সেটা অনেক বড় ব্যাপার। এবং মর্মস্পর্শী।

সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটা হাউজে কাজ করেছি। সেগুলোর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আছে, তবে বিশেষ কোনো অনুভূতি নেই। কিন্তু ঢাকাটাইমসের প্রতি আমার মমতা সুগভীর এবং প্রগাঢ়। এই ভালোবাসার এমনি এমনি জন্ম হয়নি। ঢাকাটাইমস আমার সাংবাদিকতার অন্যতম আনন্দঘন সময় উপহার দিয়েছে। স্বাধীনতা দিয়েছে। সম্মান দিয়েছে। এবং দিয়েছে আর্থিক নিশ্চয়তা। ধন্যবাদ প্রিয় সম্পাদক। আপনার নিকট কৃতজ্ঞতা। আপনার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি। ঢাকা টাইমস আরও এগিয়ে যাক।

আটলান্টিকের ওপার থেকে ঢাকাটাইমস পরিবারকে বড্ড বেশি মনে পড়ে।

লেখক:  প্রবাসী সাংবাদিক