ডিজিটাল সেন্টার

বাড়ছে সেবার বহর, গ্রাম হবে শহর

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২০

স্বপ্নের শুরুটা ছিল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্য দিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি) স্থাপন করেন। যার বর্তমান নাম ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি)। যদিও এটি শুধুমাত্র ইউনিয়নেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বর্তমানে পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য স্পেশালাইজড ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হলেও উন্নয়নের পথপরিক্রমায় এটি এখন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষের নাগরিক সেবার আস্থার প্রতিষ্ঠান।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এর মানে কিন্তু প্রতিটি গ্রামকে শহর করার পরিকল্পনা নয়, বরং গ্রামে শহরের সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে একটি স্বপ্নের তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে সোনার বাংলা গড়ে তোলা। ডিজিটাল পদ্ধতি কিংবা তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সকল কর্মকান্ডকে আরো বেশি জনবান্ধব করে তোলা, সরকারি দপ্তরের সেবাসমূহকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জনের পথে দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী যারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্থ নয় কিংবা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা গ্রহণে অনভিজ্ঞ তাদেরকে সহায়তা করার জন্যই প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার।

তৃণমূল জনগণের দোরগোড়ায় সহজে ও কম খরচে ১৫০ এর অধিক সেবা পৌঁছে দেয়ার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশের সকল পৌরসভায় 'পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে 'নগর ডিজিটাল সেন্টার' স্থাপন করা হয়।

এ সকল সেন্টারে ০১ জন পুরুষ ও ০১ জন নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন। সারাদেশে ১১ হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা বিগত ৮ বছরের এই প্রক্রিয়ায় ৪২৬.২ মিলিয়ন সেবা প্রদান করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নে সামিল হয়েছেন।

গ্রামগুলো যেন শহর না হয় এবং শহরকেন্দ্রিক সব সুযোগ-সুবিধা গ্রামগুলোতে নিশ্চিতকরণ ও শহর-গ্রামের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য কমানোর জন্য ডিজিটাল সেন্টারসমূহের উদ্যোক্তাগণ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেবার মধ্যে রয়েছে জমির পর্চার আবেদন, পাসপোর্টের আবেদন, হজ্জ্ব প্রাক নিবন্ধন, ই-চালানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফি প্রদান, পল্লী বিদ্যুৎ ফি প্রদান, জন্ম নিবন্ধন, মেডিকেল ও ভিসা প্রসেসিং, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, কম্পিউটার ও কারিগরি ট্রেড কোর্সের প্রশিক্ষণ, জন্ম নিবন্ধন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিবন্ধন ইত্যাদি। এত আয়োজনে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মোট টাকা উপার্জন হয়েছে ৪৬.০৫ মিলিয়ন, ৭৫ মিলিয়ন অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, ৪১০০ সেন্টারে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদান, ৩৮৫০ সেন্টারে রুরাল ই-কমার্স (একশপ) সেবা প্রদান, ০.২৯ মিলিয়ন গ্রামীণ নাগরিকের জীবনবীমা সেবা গ্রহণ। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সারাদেশের ভাতাভোগীদের কাছে ডিজিটাল উপায়ে সরাসরি অর্থমন্ত্রণালয় হতে ভাতা ছাড়ের তথ্য (sms) পৌঁছে যাচ্ছে এবং ভাতার অর্থ প্রদান করছেন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগণ।

সময়ের প্রয়োজনে ডিজিটাল সেন্টারকে প্রকৃত অর্থে সকলের জন্য একটি ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর আওতাধীন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপি-এর সহায়তায় পরিচালিত ‘এটুআই’-এর মাধ্যমে এ সকল ডিজিটাল সেন্টারেচালু হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধা। গ্রামের সাধারণ মানুষ আজ তাদের বাড়ির কাছেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার স্বাদ পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিলের পেমেন্ট থেকে শুরু করে পরিষেবা বিল প্রদান, রেমিটেন্স গ্রহণ সবই হচ্ছে ডিজিটাল সেন্টারে। ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট থাকায় মানুষ সঞ্চয়মূখী হচ্ছে আর এতে করে জাতীয় অর্থনীতিতে ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

গ্রামের পণ্য শহরে এবং শহরের পণ্য গ্রামে পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেটেড ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘একশপ’ সেবাচালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমেগ্রামীণ জনগোষ্ঠী অনলাইনে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য খুঁজে নেবে প্রতিযোগিতামূলক দামে ও মানে এবং একইসাথে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকের উৎপাদিতপণ্যদ্রুততমসময়েদেশেরসকলপ্রান্তেপৌঁছেযাবেকোনরকমমধ্যস্বত্ত্বভোগীর মধ্যস্ততা ছাড়াই।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল সেন্টার আজ শুধু জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে না, বরং পৌঁছে দিচ্ছে হাতের মুঠোয় সেবা। কলসেন্টার ‘৩৩৩’ এর মাধ্যমে নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে ডিজিটাল সেন্টারের অনেক সেবা। ৩৩৩ নম্বরে কল করে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সরকারি সেবা পদ্ধতির তথ্য, কর্মকর্তা/জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের তথ্য, পর্যটন সম্পর্কিত তথ্যাদি এবং সামাজিক সমস্যা যেমন- বাল্যবিবাহ, মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি বিষয়ে অভিযোগ করে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে। সেবাপ্রাপ্তি বা সরকারি দপ্তরের কাজসমূহকে আরো বেশি জনসম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ‘৩৩৩’ নম্বরকে ডিজিটাল সেন্টারের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে করে জনগণ সরাসরি তার হাতের মুঠোয় থাকা ডিভাইসটির (মোবাইল) মাধ্যমে সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে। ইন্টারনেটবিহীন এই পদ্ধতির কার্যকর প্রয়োগ একইসাথে দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের (মোবাইল ব্যবহারকারি) হাতের মুঠোয় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে পারে। এলক্ষ্যেই এ মুহুর্তে কাজ করছে সরকার তথা- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এটুআই।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ মহোদয়ের নির্দেশে উদ্যোক্তাশীপ মডেলে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেন্টারসমূহ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত। ইতোমধ্যে এই মডেলে প্রবাসীদের জন্য সৌদি আরবে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। সম্প্রতি ফিলিপাইন সরকার এটুআই এর পরামর্শে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালনকারী ডিজিটাল সেন্টারের গতকাল ১১ নভেম্বর ২০১৯ নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা