কৃষক লীগের নতুন সভাপতি সমীর চন্দ্র

কৃষকের পাশে থাকতে আগে গ্রাম সংগঠন করব

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:১০ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৩৫

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র চন্দ। একজন কৃষিবিদ হলেও তিনি নিজেকে কৃষক লীগের একজন কর্মী ও কৃষকের প্রতিনিধি হিসেবে ভাবছেন সবার আগে। কৃষক যেহেতু গ্রামকেন্ত্রিক, তাই প্রথমেই সংগঠনকে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। আর সেটি মাস দেড়েকের মধ্যে দৃশ্যমান হবে।

সরকারের তরফে কৃষকের জন্য বরাদ্দ সহায়তা যেন তাদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা চান কৃষক লীগের নতুন সভাপতি। একই সঙ্গে কৃষকবঞ্চনার কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হটাতে কাজ করবে তার সংগঠন।

বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দলে ও বিভিন্ন সংগঠনে ‘দুর্নীতি ও অনুপ্রবেশকারী’ প্রশ্ন। কৃষক লীগের আদর্শ রূপ কেমন হবে? সমীর চন্দ্র চন্দ বলেন, কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে অপসারণ করা হবে। তার ভাষ্য, নিজে দুর্নীতি করবেন না, কাউকে করতেও দেবেন না।

সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সমীর চন্দ্র কৃষক ও কৃষি নিয়ে তার নিজের সংগঠনের ভূমিকা কেমন হবে তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম মল্লিক।

ঢাকা টাইমস: কৃষকের স্বার্থরক্ষা ও তাদের সহায়তার জন্য কৃষক লীগ গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আপনাকে এর সভাপতি নির্বাচন করেছেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি কীভাবে সাজাবেন সংগঠনটি?

সমীর চন্দ্র চন্দ: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা বর্তমান সরকার নিজেকে কৃষিবান্ধব হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে। তৃণমূলের মানুষের তথা কৃষকের জন্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন আমরাও বুকে লালন করি সর্বক্ষণ। তাদের সুখ-দুঃখের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হলে আগে গ্রামভিত্তিক সংগঠন তৈরি করতে হবে। তা না হলে গ্রামের কৃষকদের বঞ্চনা-লাঞ্ছনায় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করা কঠিন। তাই আমরা প্রথমেই মনোনিবেশ করব গ্রাম ও ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠন তৈরির দিকে। তা হলে কৃষকদের সমস্যা সঠিভাবে চিহ্নিত করা যাবে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়া যাবে। আমি বললাম কৃষকদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকব, কিন্তু কীভাবে থাকব যদি আমার সংগঠন গ্রামভিত্তিক না হয়।

আমাদের কৃষকরা থাকেন গ্রামেন। জেলা শহর থেকে গিয়ে তো গ্রামের কৃষকের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়া যাবে না। তাই আমরা প্রথম এক-দেড় বছর গ্রামভিত্তিক সংগঠন তৈরি করতে পারলে কৃষকের পাশে থাকার মতো যোগ্যতা অর্জন করব। আমরা সেই পরিকল্পনা তৈরি করছি। আগামী এক মাসের ভেতরে আমাদের পরিকল্পনা আপনাদের সামনে প্রদর্শন করব আমরা। রুটম্যাপ তৈরি করব কৃষক লীগের সব কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।

ঢাকা টাইমস: আপনি কৃষক লীগের সভাপতি এবং একজন কৃষিবিদও। কৃষক ও কৃষির সমস্যা-সম্ভাবনার বিষয়ে অন্য অনেকের চেয়ে আপনার ধারণা বেশি বলেই মনে করি। কৃষকের উন্নয়নে সরকারের কাছে আপনার কী ধরনের সুপারিশ থাকবে?

সমীর চন্দ্র চন্দ: আসলে কৃষিবিদ হিসেবে নয়, কৃষকের প্রতিনিধি ও কৃষক লীগের সভাপতি হিসেবে আমি কাজ করব। কৃষকের উন্নয়নে আমাদের সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার থেকে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য যে ভর্তুকি ও বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেগুলো যেন কৃষকের দুয়ারে সঠিকভাবে যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। সরকার ও কৃষকের মাঝখানে যে ব্যবস্থাটি কাজ করে, সেখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকলে তা দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কূটকৌশলের কারণে কৃষকের জন্য সরকারের মহতী উদ্যোগগুলো কিছু কিছু সময় ব্যাহত হয়।

আর একটা বিষয় হলো কৃষিপণ্যের মধ্যস্বত্বভোগী। তাদের কারণে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না। কৃত্রিমভাবে বাজারকে প্রভাবিত করে তারা কৃষককে বঞ্চিত করে। যেমন ধানের ভরা মৌসুমে কিছু কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ধানের বাজারটা ফেলে দেয়। সেই জায়গা থেকে আমরা কৃষক লীগ সহায়তা করতে পারি সরকারকে। আমি মনে করি বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের যে সুযোগ তৈরি করেছেন সেগুলোর সুফল পাবেন কৃষকরা। সরকারের গৃহীত সব সুযোগ-সুবিধা কৃষক যেন সঠিকভাবে পায়, কৃষক লীগ সেখানে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে। এই ব্রত নিয়ে কৃষক লীগের একজন কর্মী হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে আমি কৃষক লীগের কাজটা শুরু করেছি।

ঢাকা টাইসম: আপনার নেতৃত্বে কৃষক লীগের কমিটির আদর্শ রূপ কেমন হবে?

সমীর চন্দ্র চন্দ: দেখুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও সংগ্রামী সভাপতি। তিনি নিজের ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এমনই এক সময়ে নেত্রী আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন কৃষক লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। সেই আস্থার যথার্থ সম্মান দেব কৃষক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষেত্রে। কোনো রকম অসৎ উপায় কিংবা দুর্নীতিকে আমরা তথা সাধারণ সম্পাদক ও আমি বরদাশত করব না। ইতোমধ্যে আমরা দুজন শপথ নিয়েছি বঙ্গবন্ধুর নামে। নিজেরা তো দুর্নীতি করবই না, কাউকে করার সুযোগও দেব না। রকম বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কৃষক লীগ করার এখতিয়ার থাকবে না। কেবল বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণকারী স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের নিয়ে চলবে কৃষক লীগ।

ঢাকা টাইমস: দলে অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে ইদানীং। শুদ্ধি অভিযানও চলছে। কৃষক লীগে কি অনুপ্রবেশকারী আছে? থাকলে আপনার ভূমিকা কেমন হবে?

সমীর চন্দ্র চন্দ: আপনাকে এ কথা বলতে পারি, অন্য দলের কিংবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে না এমন কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে আমাদের সংগঠনে স্থান পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। ভবিষ্যতে অজ্ঞাতসারে যদি কারও অনুপ্রবেশ ঘটে যায়, প্রমাণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে দল থেকে অপসারণ করা হবে।

দেখুন আপনার মতো আমরাও মানুষ। আমাদের জ্ঞানের ও জানার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই আমি কিংবা কেউই গর্ব করে বলতে পারব না যে হান্ড্রেট পার্সেন্ট সঠিক পারব। কিন্তু আমাদের মানসিকতা এ রকম যে, অনুপ্রবেশকারী কেউ যদি কোনো কারণে স্থান পেয়েও যায়, সেটা প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো রকম দুর্বলতা আমাদের কাজ করবে না তাদের দলে না রাখার ব্যাপারে।

আমরা শপথ নিয়েছি এক কাপ চাও আমরা কারও কাছ থেকে খাব না। কাউকে চা খেতেও দেব না। আমরা চাই দল পরীক্ষিত নেতাকর্মী দিয়ে তৈরি হোক। আর অনুপ্রবেশকারীরা মিনিমাম দশ বছর পরীক্ষা দিয়ে সংগঠনের পদ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে তখন আমরা বিবেচনা করব।

গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের ১০ম সম্মেলনে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা দুজন আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এর আগে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের নবম কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ওই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।

১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। ১৫ আগস্ট শহীদ হন এই কৃষক নেতা।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :