ট্রলারডুবিতে নিহত ৯ জেলের দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৪২

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পড়ে ভোলায় ট্রলারডুবিতে মারা যাওয়া নয় জেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিজ নিজ বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়। এ সময় নিহতের বাড়িতে দেখা দেয় শোকের মাতম। ট্রলারডুবিতে এই থানার নয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় শোকের আবহ দেখা দিয়ে পুরো উপজেলায়।

এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রোকোনদিয়া এলাকার মেঘনা নদীর পাড় হতে ট্রলারটির মধ্যে থেকে নয় জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়।

এছাড়া রবিবার রাতে মেঘনা নদীর মধ্যে থাকা অবস্থায় ট্রলারটিতে কোস্টগার্ডের ডুবুরিদল অভিযান চলিয়ে খোরশেদ নামে একজন জেলের মৃত দেহের খোঁজ পায়। ওই রাতেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত জেলেরা হলেন, চরফ্যাসন উপজেলার আবুবকরপুরের মৃত নুরুল হকের ছেলে কামাল দালাল (৩৫), উত্তর শিবার মজিবুল হক মুন্সির ছেলে আব্বাস মুন্সি (৪৫), নুরাবাদের কাদের মোল্লার ছেলে হাসান মোল্লা ( ৩৮), উত্তর শিবার মৃত জামাল বিশ্বাসের ছেলে রফিক বিশ্বাস (৪৫), নুরাবাদের কাদের ব্যাপারীর ছেলে নুরনবী ব্যাপারী (৩০), দুলার হাটের ছলেমান মাতাব্বরের ছেলে মফিজ মাতাব্বর (৩৬), ফরিবাদারে ইয়াসিন পাটোয়ারির ছেলে নজুরুল ইসলাম (৩৫), একই এলাকার মোসলেউদ্দিন মাঝির ছেলে কবির হোসেন (৪০), আব্দুল্লাহপুরের ইসমাইল খানের ছেলে মো: বিল্লাহ (৩২)।

এদিকে সোমবার রাতেই উদ্ধার হওয়া ট্রলার ও মৃতদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গভীর রাতে নিহতদের লাশ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মাছ ধরার ট্রলারটি চরফ্যাসন উপজেলার আব্দুল্লাহপুরের তোফায়েল মাঝির। রবিবার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুর থেকে মাছ বিক্রি করে চরফ্যাসনে ফেরার পথে ইলিশার জনতাবাজার খাল সংলগ্ন মেঘনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কবলে পড়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। এই ঘটনার জন্য তোফায়েল মাঝিতে দায়ী করেন নিহতদের পরিবার।

নিহত মো. মফিজ ও কামাল দালালের মা নুরজাহান ও বিবি হাজেরা বলেন, মফিজ ও কামাল গত ৩১ অক্টোবর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের তোফায়েল মাঝির সঙ্গে সাগরে মাছ ধরতে যায়। নয় দিন সাগরে মাছ ধরার পর গত শুক্রবার ফিরে এসে বরিশালে মাছ বিক্রি করতে যায়। সেখানে মাছের দাম কম হওয়ায় তোফায়েল মাঝি তাদের চাঁদপুরে নিয়ে যায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ট্রলারে থাকা অনেক জেলেই যেতে চায়নি।

সর্বশেষ তোফায়েল মাঝির চাপে তারা চাঁদপুর যেতে বাধ্য হয়। শনিবার মাছ বিক্রি শেষ হলে তোফায়েল তাদেরকে নিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মধ্যেই চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জেলেরা পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে রওনা দেয়ার কথা জানালে তারা মাঝিকে এই ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যে ট্রলার ছাড়তে নিষেধ করেন। কিন্তু তোফায়েল মাঝি কারও কথা না শুনে জোর করেই ট্রলার ছেড়ে দেয়। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ট্রলারটি ভোলার সীমান্তবর্তী এলকার মেঘনা নদীতে ২৪ জেলেকে নিয়ে ডুবে যায়। এঘটনায় নিহতের পরিবার ক্ষতিপূরণ ও তোফায়েল মাঝির শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতে নিহত জেলেদের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর সকালে ট্রলারের মালিক তোফায়েল মাঝি লাশগুলো জেলেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আর কোনো খবর নেয়নি।

ট্রলারের মালিক তোফায়েল মাঝি পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

এদিকে নিহত ১০ জেলের পরিবারগুলো একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিহত ১০ জেলের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক।

উল্লেখ্য, গত রবিবার চাঁদপুর থেকে মাছ বিক্রি করে একটি ট্রলারে করে ২৪ জেলে চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুপুরের দিকে ট্রলারটি মেঘনা নদীর ভোলা-বরিশাল সীমান্তবর্তী এলাকা মেহেন্দীগঞ্জের রুকুন্দী পয়েন্টে আসলে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। পরে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের সদস্যরা মাঝিসহ ১০ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে। এবং সন্ধ্যার দিকে মোরশেদ নামে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড।

কিন্তু ট্রলারে থাকা বাকি ১৩ জনের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কয়েকটি টিম মেঘনা নদীতে অভিযান চালায় এবং ডুবে যাওয়া ট্রলারটিও উদ্ধারের চেষ্টা চলে। সর্বশেষ সোমবার রাতে পর নদীতে ভাটার সময় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করলে ট্রলারটির কেবিনের মধ্যে নয় জেলের মরদেহ পাওয়া যায়।

ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এমআর