নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা ঠিক হয়নি

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:১০ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২৮

‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নূর হোসেনের পরিবার কান্নাকাটি করুক, এটা আমি চাই না’

নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা ঠিক হয়নি বলে মত ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা। বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির তৃণমূলের কর্মীদের যে আজাহারি আমি দেখেছি, তাতে এই শব্দগুলো (ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর) ব্যবহার করে ফেলেছি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নূর হোসেনের পরিবার কান্নাকাটি করুক, এটা আমি চাই না।’

মঙ্গলবার ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপে সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

গত রবিবার (১০ নভেম্বর) গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাপার একটি আলোচনা সভায় করা বক্তৃতায় দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। যা গণমাধ্যমে প্রচারের পর দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। ওই সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। তার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতা এক হয়ে রাজপথে নেমেছিল। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন।

মশিউর রহমান রাঙ্গা দাবি করেন, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে আংশিক প্রচার করা হয়েছে। তিনি যে প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন, তার পূর্বাপর প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়নি। এতে জনগণের মধ্যে ভুলবার্তা গিয়েছে।

কী প্রসঙ্গে আপনি নূর হোসেন সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন?

আমরা একটা ঘরোয়া আলোচনা হয়েছিল। আমাদের কমিটির বিভিন্ন অসুবিধার কথা সেদিন শুনেছি। তাদের একটাই অভিযোগ, নূর হোসেন দিবস আসলেই স্লোগান দেওয়া হয়, ‘এরশাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘এরশাদ স্বৈরাচার’— বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয় তারা। আমাদের দুঃখটা হলো এখানে যে, আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই সরকারকে চারবার ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। ১৯৯৬ সালে এনেছে। ২০০১ সালে আমরা সমর্থন করিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২০০৮ সালে আমরা সমর্থন করেছি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৪ সালে আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছি, নির্দেশের বাইরেও আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছি। ২০১৯ সালেও আমরা জোট করেও মন্ত্রিসভায় যাইনি। আমরা বিরোধী দলে আছি।

এর সঙ্গে নূর হোসেন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার সম্পর্ক কী?

সবাই অভিযোগ করেছিল, নূর হোসেন দিবস এলেই সবাই পল্লীবন্ধুকে স্বৈরাচার বলে স্লোগান দেন। এটি কেউ মেনে নিতে পারেন না। তার উপর যেই আওয়ামী লীগকে আমরা বারবার ক্ষমতায় আসতে সহযোগিতা করলাম, তারাই এখন আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা করে হয়রানি করছে। নেতাকর্মীদের সেদিনের আহাজারি আমি দেখেছি। তাতে আমি নূর হোসেন সম্পর্কে ওই শব্দগুলো ব্যবহার করেছি।

আপনার এই বক্তব্য নূর হোসেনের পরিবার তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও আহত করেছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

আমার বক্তব্যের কয়েকটি লাইন প্রচার হয়েছে। আমি এখানে আরও অনেক কথা বলেছি। সেগুলো তারা বলেনি। আমার একটা লাইন শুধু তারা বলেছে। যেহেতু তখন ইয়াবাও ছিল না, ফেনসিডিলও ছিল না, তাই আমি তার পরিবারের প্রতি দুঃখপ্রকাশও করেছি। এই দুটি শব্দ আমার বলা উচিত হয়নি। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তার পরিবার কান্নাকাটি করুক, এটা আমি চাই না। যাই হোক, নূর হোসেন তো মারা গেছেন। এটা তো বেদনার। আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার বিষয়ে বলছিলেন...

হ্যাঁ, দেশের দুর্গম এলাকায়, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুধের দাঁতই পড়েনি সেই ছেলেগুলো আমাদের নেতাকর্মীদের বেইজ্জতি করছে। মারধর করছে। তাদের মামলা দিয়ে থানায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ইয়াবা-ফেনসিডিলের মামলা দিচ্ছে। এগুলো যখন আমাদের মিটিংয়ে লোকজন জানালো, আমরা তখন বলেছি, নূর হোসেন দিবস যদি পালনই করা হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কোথায়? তারা যদি এরশাদকে স্বৈরাচার বলে, তাদেরকেই তো আমরা ক্ষমতায় নিয়ে এসেছি, তারা বলুক যে, আমরা স্বৈরাচারের সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছি। বলুক এটা!

নূর হোসেনের পিঠে গুলি লাগা নিয়েও আপনি মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে শুনতে চাই। 

নূর হোসেনের পিঠে গুলি লেগেছে। ডা. মিলনের পিঠে গুলি লেগেছে। পিঠে কখন গুলি লাগে? তখন তো আন্দোলনকারীরা একটা লাশ চাচ্ছিলো। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের আন্দোলন তরান্বিত করতে তারা একটা লাশ ফেলতে চাইছিল। এগুলো নিয়ে আমরা কখনো আলোচনা করতে চাই না। যেহেতু আমাদের সঙ্গে জোট হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদকে স্বৈরাচার বলে স্লোগান দেয়।

নূর হোসেনের পিঠে গুলি লেগেছিল, এ ঘটনায় কি প্রমাণ হয় যে পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যাননি?

আমি তা বলছি না। তবে নূর হোসেনকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হত্যা করেনি। আমি মনে করি, ওই ঘটনার আবার তদন্ত হোক। বিচার হোক। লাশের তো একবার ময়নাতদন্ত হয়েছে। এখন চাইলে আবারও দেহাবশেষ তুলে তদন্ত হতে পারে। এটা একটা সুরাহা হওয়া উচিত। একই দিনে আমাদের গণতন্ত্র দিবস, একই দিনে স্বৈরাচার দিবস, তারা যদি এটা করে তাহলে দুঃখজনক।

নূর হোসেন নিহত হওয়ার পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কি কখনো তার পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছিলেন?

অবশ্যই। ওই সময় এরশাদ নূর হোসেনদের বাসায় গিয়েছিলেন। প্রত্যেক মাসে মাসে নূর হোসেনের পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছেন এরশাদ তার নিজস্ব তহবিল থেকে। তিনি বাসায় গিয়ে সরি বলে আসছে। এটা তো পুলিশ মেরেছে। এরকম তো পুলিশ এখনো খুন, গুম করছে’ তাহলে কি তার সব দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে?

জাতীয় পার্টির পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হতে পারে?

আমরা এটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো। আমরা কী করলে ওনারা খুশি হবেন, কী বললে ওনারা অসন্তুষ্ট হবে, এটা জানা দরকার। আমরা কথা বলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঠিক করবো।