দুর্লভ জীববৈচিত্র্যের স্বর্গরাজ্য ‘গালাপাগোস’

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:১৫

আবুল কাশেম, ঢাকা টাইমস

অনেকগুলো আগ্নেয়গিরির সমন্বয়ে গঠিত গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। প্রশান্ত মহাসাগরে বিষুব রেখার দুই পাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই দ্বীপগুলো ইকুয়েডরের সমুদ্র সৈকত থেকে ৯৭২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। অসাধারণ ও দুর্লভ জীববৈচিত্রের জন্য এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

এখানে প্রচুর বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এই প্রজাতিগুলো গালাপাগোস ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। বিবর্তন তত্ত্বের জনক চার্লস ডারউইন এই দ্বীপে এসেছিলেন। ডারউইনের ভ্রমণই গালাপাগোসকে বিখ্যাত করেছে। কারণ এখানকার বৈচিত্র্যময় বিরল প্রজাতিগুলো নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই ডারউইন প্রথমবারের মত বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ পেতে শুরু করেন। এখানকার অনেকগুলো প্রজাতি ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছে।

ক্যাপ্টেন ফিৎজরয়ের নেতৃত্বে চার্লস ডারউইন এই দ্বীপে এসেছিলেন ১৮৩৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর। তারা মূলত চারটি দ্বীপে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করেছিলেন। দ্বীপ চারটি হল চ্যাথাম, চার্লস, অ্যালবেমার্ল এবং জেমস আইল্যান্ড। এই দ্বীপে এসেই ডারউইন লক্ষ্য করেছিলেন এখানকার মকিংবার্ডগুলো একেক দ্বীপে একেক রকম বর্তমানে এই পাখিগুলোকে ডারউইনের ফিঞ্চ বলা হয়। যদিও সেসময় ডারউইন মনে করেছিলেন এদের সঙ্গে কোন গভীর সম্পর্ক নেই এবং দ্বীপ অনুযায়ী তাদের আলাদা নামকরণের বিষয়টিও ভ্রমণের সময় তিনি চিন্তা করেননি।

সেসময় ইকুয়েডর প্রজাতন্ত্রের গালাপাগোস প্রদেশের গভর্নর নিকলাস লসন চার্লস দ্বীপে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। ডারউইনের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, কচ্ছপও একেক দ্বীপে একেক রকম। দ্বীপপুঞ্জে থাকার শেষ দিনগুলোতে ডারউইন ভাবতে শুরু করেছিলেন, একেক দ্বীপে ফিঞ্চ ও কচ্ছপের এই বৈচিত্র্য প্রজাতির পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণার জন্ম দিতে পারে।

ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ডারউইন গালাপাগোসসহ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো অভিজ্ঞ জীববিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদের দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পেলেন, গালাপাগোসের ফিঞ্চগুলো বিভিন্ন প্রজাতির এবং দ্বীপ অনুযায়ী তাদের বৈশিষ্ট্য অনেক ভিন্ন। এই তথ্যগুলোই ডারউইনকে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন এর মাধ্যমে বিবর্তন প্রমাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ ধারণা থেকেই তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই অন ‘দি অরিজিন অব স্পিসিস’ রচনা করেন।

প্রকৃতপক্ষে জীববৈচিত্রের এক অপরূপ ভাণ্ডার গালাপাগোস দ্বীপ। মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এই দ্বীপ ছিল ডাকাতদের আস্তানা। এই দ্বীপে রয়েছে সামুদ্রিক ইগুয়ানা, জায়ান্ট কচ্ছপ, নীল পায়ের বুবি পাখিসহ বিরল প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী। যাদের পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না।

দ্বীপটির পানিতে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৮০০ ধরনের শামুক জাতীয় প্রাণী। এর মধ্যে ঝিনুক, স্কুইড ও অক্টোপাসও রয়েছে। রয়েছে বিশালদেহী হোয়েল শার্ক। প্রাণীদের এই সুবিশাল প্রাচুর্য থাকায় গালাপাগোসকে প্রাণীজগতের মাতৃভাণ্ডার বলা হয়।

ঢাকা টাইমস/১২নভেম্বর/একে